Home » » যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

যাকাত আরবি শব্দ। এর কয়েকটি অর্থ রয়েছে। যেমন- পবিত্রতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং প্রবৃদ্ধি- ক্রমবৃদ্ধি । যাকাতের সংজ্ঞা হলো- কোন ‘সাহিবে নিসাব' মুসলমানের তথা নিজ ও নিজ পরিবার-পরিজনের জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় বাৎসরিক ব্যয় মেটানোর পর বছর শেষে যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা তার সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকে, তবে উক্ত ধন সম্পদের শতকরা আড়াই (২.৫%) ভাগ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আটটি খাতে প্রদান করাকে যাকাত বলা হয় ।

প্রত্যেক ‘সাহিবে নিসাব' বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের অধিকারী মুসলিমের ওপর যাকাত প্রদান করা ফরয। অনেক কিছুর ওপরই যাকাত ফরয হয় এবং তা দিতে হয়। জমাকৃত স্বর্ণ, রৌপ্য, জমির ফসল, ব্যবসায়ের পণ্য, ঘরপালিত গবাদি পশু, গরু, ছাগল, উট, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছলে যাকাত দিতে হয়।


যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিম্নে দেয়া হলো :

ফরয ইবাদাত : যাকাত একটি আবশ্যকীয় ফরয ইবাদাত। যার ওপর যাকাত ফরয হয়েছে, তাকে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। কুরআনের বহু স্থানে সমান গুরুত্ব দিয়ে নামাযের সাথে সাথে যাকাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাকাত অস্বীকারকারী কাফির। এ মর্মে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন- “যারা যাকাত আদায় করে না, তারা আখিরাতে অস্বীকারকারী।” (সূরা হামিম-আস-সাজদা : ৬-৭)

ঈমানের পরীক্ষা : যাকাত ফরয করে আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাকে এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন যে, সে ধন- সম্পদের মোহ ত্যাগ করে আল্লাহর পথে স্বেচ্ছায় সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ ব্যয় করে কিনা। আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেছেন- “নিশ্চয় তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ।”

জাহান্নাম হতে মুক্তি : যাকাত আদায়কারী জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। অপরপক্ষে যাকাত আদায় না করলে মহাপাপী হবে এবং জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ মর্মে আল্লাহ তা'আলা বলেন- “যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে, অথচ আল্লাহর রাস্তায় তা খরচ করে না, আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সংবাদ প্রদান করুন।” (সূরা তাওবা ৯: 98)

আধ্যাত্মিক শান্তি : একজন মুসলিম স্বেচ্ছায় যাকাত প্রদান করে তার ধন-সম্পদের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে। সে স্বীকার করে ধন-সম্পদ আল্লাহর দান এবং তিনি ইচ্ছা করলে তা কেড়েও নিতে পারেন। তাই আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী যাকাত আদায় করে সে আধ্যাত্মিক শান্তি লাভ করে। যাকাতদাতার মনে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা জন্মায়। তাই যাকাতদাতা সম্পদের সঠিক হিসাব করে নির্ধারিত খাতে ব্যয় করে। এক্ষেত্রে কোন রূপ ফাঁকির প্রবণতা সৃষ্টি হয় না ।


যাকাতের সামাজিক শিক্ষা

যাকাতের সামাজিক শিক্ষা ব্যাপক । আমরা যাকাতের সামাজিক শিক্ষার কিছু দিক এখানে জানাবো :

বৈষম্য দূরকরণ :

যাকাতের মাধ্যমে সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যকার বিরাজমান বৈষম্য ক্রমে হ্রাস পায় এবং তাদের মধ্যে আর্থ-সামাজিক সমতা সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

দারিদ্র্য বিমোচন :

‘সাহিবে নিসাব' ধনী ব্যক্তিগণ যদি সততার সাথে এবং আল্লাহর নির্দেশমত যাকাত আদায় করেন, তাহলে সমাজে কোন মানুষ অন্নহীন-বস্ত্রহীন এবং ঘরহীন থাকতে পারে না। দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা সীমাহীন।

সেতুবন্ধন :

যাকাত আদায়ের মাধ্যমেই সমাজে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ, সহৃদয়তা ও সহনশীলতার উন্মেষ ঘটে। কেননা যাকাত হচ্ছে সমাজে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণের একটি সুন্দরতম সেতুবন্ধন। মহানবি (স) বলেছেন “যাকাত ইসলামের সেতুবন্ধন।”

সহানুভূতি সৃষ্টি:

যাকাত প্রদানের মাধ্যমে যাকাতদাতা সমাজে অর্থনৈতিকভাবে যারা পিছিয়ে আছে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। ফলে সমাজে ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ কমে আসে। গরিবরাও ধনীদেরকে তাদের বন্ধু মনে করে এবং সহানভূতিশীল হয়ে ওঠে। ধনিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যাকাত ও দানের অর্থে সমাজের অভাবগ্রস্তদের প্রয়োজন মিটিয়ে বহু সমাজকল্যাণকর ও জনহিতকর কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারে। ফলে সমাজ সমৃদ্ধ হয়।


যাকাতের অর্থনৈতিক শিক্ষা

যাকাতের অর্থনৈতিক শিক্ষার কয়েকটি দিক সম্পর্কে জানবো :

জাতীয় আয় :

যাকাত ইসলামি রাষ্ট্রের আয়ের একটি বড়ো উৎস। 'সাহিবে নিসাব' ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ ‘জাতীয় যাকাত তহবিলে' প্রদান করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে পারে। ধনী-দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক যে ব্যবধান, তা যাকাতের মাধ্যমে দূর হতে পারে। যাকাতের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।

অর্থনৈতিক নিরাপত্তা :

যাকাত মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান করে। অক্ষম ও অসমর্থ সকলকেই যাকাতের অর্থ দিয়ে পুনর্বাসন করতে হয়। এতে যাকাত সর্বজনীন অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়। যাকাত প্রদানের খাতগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সর্বজনীন অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য এটা কত গুরুত্বপূর্ণ। যাকাতের ৮টি খাত হচ্ছে-

(ক) গরিবদের সাহায্য ও জীবিকার বন্দোবস্ত।

(খ) অভাবগ্রস্তদের সাহায্য ও জীবিকার বন্দোবস্ত । (গ) যাকাত আদায়ের প্রশাসনিক ব্যয় ।

(ঘ) দাসমুক্ত করা।

ঙ. ঋণগ্রস্তদের সাহায্য।

চ. নও-মুসলিমদের সাহায্য ও পুনর্বাসন।

ছ. মুসাফিরদের সাহায্য।

জ. আল্লাহর পথে কল্যাণকর সামাজিক কার্যে ও যুদ্ধ-জিহাদে।

কুরআনে নির্দেশিত উপরিউক্ত আটটি খাতকে সম্প্রসারিত করে যাকাতের অর্থ আরো ব্যাপকায়তনে অর্থনৈতিক প্রয়োজনে লাগানো যায় । সুতরাং যাকাতের ভূমিকা অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে খুবই বিস্তৃত ।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি :

যাকাত অভাবগ্রস্ত দরিদ্র-দুস্থ মানুষের অভাব-অনটন বিমোচনে এবং জীবন-জীবিকা যোগানদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাকাত রাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে, যাকাতের অর্থের মাধ্যমে দরিদ্রের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ও ভারী শিল্প ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দরিদ্র-বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। যাকাতের অর্থ দিয়ে গড়ে ওঠা এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানে গরিব-অভাবী ব্যক্তিরা কাজ করে অর্থোপার্জন করতে পারে এবং তাদের পরিবারের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অভাব পূরণ করতে পারে। তাছাড়া যাকাতলব্ধ অর্থ দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঋণমুক্ত করা যায়।

সম্পদের ক্রমবৃদ্ধি :

যাকাত প্রদানের ফলে সম্পদ কোথাও পুঞ্জিভূত হয়ে থাকতে পারে না, অগণিত মানুষের হাতে অর্থ পৌছে। ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে, বাজারে চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়ে, উৎপাদন বাড়লে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। ফলে বেকারত্ব দূর এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি ঘটে। এভাবে যাকাত ইসলামি সমাজে কর্ম, ভোগ, উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করে। যাকাত সম্পদ মজুদ করার ঘোর বিরোধী। যাকাত অর্থকে অলসভাবে মজুদ করে রাখার প্রবণতা দূর করে এবং সঞ্চিত সম্পদ বিনিয়োগ করার জন্য বলিষ্ঠ প্রেরণা যোগায়। ফলে অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব তিরোহিত হয়ে যায়। যাকাতের উদ্দেশ্য এবং যাকাতের অর্থ ব্যয় করার খাতসমূহ সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত। কাজেই এক্ষেত্রে অপচয়ের সম্ভাবনা নেই। আধুনিক করের মতো যাকাতের ব্যাপারে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বিরল। মানুষ ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে যাকাত দিয়ে থাকে। সুতরাং যাকাত হচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আনুগত্য। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফাঁকি ও প্রতারণার প্রবণতা দূর করার ক্ষেত্রে যাকাতের ভূমিকা অনন্য।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *