ইবাদত কাকে বলে
ইবাদাত আরবি শব্দ। এর অর্থ দাসত্ব করা, বন্দেগি করা, আনুগত্য করা, উপাসনা করা, স্তব-স্তুতি করা, আরাধনা-অর্চনা করা ।
ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমরা তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাঁর প্রেরিত নবীর প্রদর্শিত পথে যে কাজ করি তাই ইবাদাত। আল্লাহর প্রতি মানুষের যে সব দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে তা পালন করাই ইবাদাত। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হল ইবাদাতের মূল লক্ষ্য। সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেক আল্লাহ নির্দেশিত যে কোন কাজই ইবাদাত। মোটকথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) কর্তৃক নির্দেশিত পথের সমস্ত কাজই ইবাদাত। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (স) প্রদর্শিত পথে চলাই ইবাদাত। এভাবে আমরা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে চলি তাহলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন। আমাদের তিনি পুরস্কৃত করবেন। দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা পাব অনাবিল সুখ আর শান্তি ।
মানব জীবনে ইবাদাতের গুরুত্ব
ইবাদাতের জন্যই মানুষের সৃষ্টি
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন ও পালন করছেন। তাঁরই হাতে রয়েছে আমাদের জীবন-মরণ। তিনিই আমাদের মালিক- মনিব, প্রভু। আমরা তাঁর বান্দা। আমাদের কাজ হল তাঁর হুকুমমত চলা ও তাঁরই ইবাদাত-বন্দেগি করা। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁরই ইবাদাত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন- “আমি জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি।” (সূরা যারিআত ৫১ : ৫৬)
আল্লাহর ইচ্ছার বাস্তবায়নই ইবাদাত
আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব (আশরাফুল মাখলুকাত) হিসাবে অতীব সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। আমরা আল্লাহর অগণিত নিয়ামতরাজির মধ্যে ডুবে আছি। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁরই প্রতিনিধি করে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। তাই আমরা আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে একমাত্র তাঁরই আদেশ-নিষেধ মেনে চলব, তাঁরই নিয়মমত পৃথিবীকে চালাব, এটাই আমাদের কাছে ইসলামের দাবি।
ইবাদাত কেবল আল্লাহর জন্যই
মহাবিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র আল্লাহ। তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতায় আর কারও অংশীদারিত্ব নেই, তার সমকক্ষও কেউ নেই। তাই ইবাদাত করতে হবে একমাত্র তাঁরই জন্য। আল্লাহ বলেন - “তারা তো কেবল এ জন্যেই আদিষ্ট হয়েছে যে, আল্লাহর জন্যে একান্তভাবে দাসত্ব ও গোলামী করবে।” (সূরা বায়্যিনাহ ৯৮ : ৫)
বান্দার সকল কাজই ইবাদাত
ইবাদাত মানে শুধু উপাসনা বা আধ্যাত্মিক ইবাদতকে বুঝায় না। আল্লাহর নির্দেশিত পথে মুমিনের সকল কর্মকাণ্ড ইবাদাতের শামিল। আল্লাহর ঘোষণা থেকে তাই বুঝা যায়। তিনি বলেন : “সালাত আদায় করার পর ভূ-মণ্ডলে ছড়িয়ে পড়, আর আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে ব্যাপৃত হও।” (সূরা জুমুআ ৬২ : ১০)
ইবাদাত সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহর জন্য
মানুষ যাতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মানার যোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হয়; সে জন্য আল্লাহ তা'আলা দয়া করে আমাদের জন্য সালাত, সাওম, যাকাত ও হজ্জের মত চারটি বুনিয়াদি ইবাদাত বাধ্যতামূলক করেছেন। নির্দিষ্ট সময়ে এই ইবাদাতগুলোর মাধ্যমে আমরা সর্বক্ষণের জন্যে আল্লাহর ইবাদাত করার এবং ইবাদাতে নিয়োজিত থাকার যোগ্যতা অর্জন করতে পারি।
সকল নবী ইবাদাতের প্রতি আহ্বান করেছেন
পৃথিবীতে যত নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে, সবাই আল্লাহর ইবাদাতগুযার বান্দা ছিলেন। যেমন- আল্লাহ বলেন : “তারা সবাই আমার ইবাদাতগুযার বান্দা ছিলেন।” (সূরা আম্বিয়া ৭৮ : ৭৩) আর সকল নবী-রাসূলের একই আহ্বান ছিল-
‘তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুতকে পরিত্যাগ কর।”
দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য ইবাদত
মানুষের পার্থিব জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য যেমন আল্লাহর ইবাদত করা এবং তারই হুকুম আহকাম মেনে চলা অপরিহার্য, তেমনি পরকালীন জীবনে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতের অনন্ত সুখ-শান্তির জন্য ইবাদাত করা প্রতিটি মানব সন্তানের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions