Home » » বায়ু প্রবাহ কি

বায়ু প্রবাহ কি

বায়ু প্রবাহ কি

বায়ু প্রবাহ হচ্ছে বায়ুর সমতলীয় চাপের পার্থক্যের ফল। বায়ু উচ্চচাপ অঞ্চল হতে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। প্রবাহের মাধ্যমে চাপের সমতা বিধানের জন্য বায়ুর প্রবাহ অবিরত থাকে। অসম তাপ বন্টনের ও তাপ গ্রহণের ফলে ভূপৃষ্ঠে বায়ু চাপের পার্থক্য হয় অর্থাৎ বায়ুপ্রবাহের চালিকা শক্তি হচ্ছে শোষিত সৌরশক্তি। পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি না থাকলে উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে বায়ুর এই প্রবাহ সরল ও নিয়ত হত। বায়ুপ্রবাহ কয়েকটি বিশেষ শক্তির সম্মিলিত কারণ যথা : ১. চাপের ক্রমাবনতি; ২. কোরিওলিস প্রভাব; ৩. কেন্দ্র বিমূখী বল; ৪. ঘর্ষণ; ৫, মাধ্যাকর্ষণ।


চাপের ক্রমাবনতি শক্তি 

চাপের মাত্রা হচ্ছে বায়ু প্রবাহের প্রকৃত শক্তি। মাধ্যাকর্ষণ বায়ুকে পৃথিবী পৃষ্ঠের দিকে টেনে নামাতে চায়, যার নামই হচ্ছে বায়ুচাপ। দুটি স্থানে এই চাপের মাত্রা ভিন্ন হতে পারে। নির্দিষ্ট দূরত্বে ভূ-পৃষ্ঠে দুটি স্থানের চাপের পার্থক্যই হচ্ছে চাপের ক্রমাবনতি (Pressure Gradient)। কোথাও চাপের পার্থক্য থাকলে তবে তা উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয়। চাপমাত্রার পার্থক্য তখনই বৃদ্ধি পায় যখন নির্দিষ্ট দূরত্বের দুটি স্থানে চাপের পার্থক্য বৃদ্ধি হয়। সাধারণত বায়ুর তাপমাত্রার পার্থক্যের সাথে সাথে চাপের পার্থক্য ঘটে কেননা বায়ুর ঘনত্বের পরিবর্তন ঘটে। উষ্ণ বায়ু হালকা বা কম। ঘনত্বের হয় এবং উপরে উঠে যেতে চায়, ফলে ভূ-পৃষ্ঠে দেশে চাপ কমে যায়। উচ্চ অক্ষাংশের শীতল ও ভারী বায়ু তখন এদিকে প্রবাহিত হয়। শীতল ও ভারী বায়ু নিচের দিকে চাপ সৃষ্টি করে ও উচ্চচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়ে শূন্যস্থান দখল করে।

চাপমাত্রার উপর বায়ু প্রবাহের সরল ও সাধারণ উদাহরণ হচ্ছে স্থল বায়ু ও সমুদ্র বায়ু। দিনের বেলা স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ হলে সমুদ্র থেকে বায়ু স্থলভাগের কম ঘনত্বের বায়ু সম্পন্ন কম চাপের বায়ুর দিকে প্রবাহিত হয়, যাকে সমুদ্র বায়ু বলে। আবার রাত্রিবেলা স্থলভাগ দ্রুত ঠান্ডা হলে ভারী বায়ু সমুদ্রের হালকা ও উচ্চ বায়ুচাপ স্থানের দিকে প্রবাহিত হয়।


কোরিওলিস প্রভাব (Coriolis Effect) 

বায়ু প্রবাহ সাধারনত: ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। প্রবাহের এই ধরণ পরিবর্তনকে কোরিওলিস শক্তি (Coriolis force) বলে।

গোলার্ধ ভিত্তিক এই পরিবর্তন কোন প্রবাহিত চলমান (moving) বস্তুর উপর পৃথিবীর ঘূর্ণন বলের প্রভাব বলে অনুমান করা যায়। এই বা দিক পরিবর্তনকারী শক্তি

(১) বায়ু প্রবাহের দিকের সাথে সর্বদা লম্বভাবে (৯০°) ক্রিয়া করে; 

(২) বায়ু প্রবাহে কেবল মাত্র দিক পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে, গতির উপর কোনো প্রভাব ফেলে না;

(৩) কোরিওলিস বা গোলার্ধ প্রভাব মেরুতে সর্বাধিক, নিরক্ষীয় অঞ্চলে কমতে থাকে, বিষুব রেখায় এর অস্তিত্ব লোপ পায়।


ঘর্ষণ শক্তি (Frictional force)

 বায়ু প্রবাহ ভূ-পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় অসমতল ভূমিরূপের কারণে কিছু সংঘর্ষ ও ঘর্ষণের সৃষ্টি করে। ঘর্ষণ বলের মাত্রা ভূ-পৃষ্ঠের অসমতার উপর নির্ভর করে। যেমন তুষারাবৃত্ত ও সমুদ্র পৃষ্ঠে বায়ু প্রবাহ মসৃণ তলের উপর কম ঘর্ষণের সৃষ্টি করে। অন্যদিকে আকাশচুম্বি অট্টালিকা সমৃদ্ধ নগরী অথবা পাহাড়ী অসম গঠনে ঘর্ষণ বেশী মাত্রায় হয়।

0 comments:

Post a Comment

Comment below if you have any questions

Contact form

Name

Email *

Message *