Home » » বায়ুর চাপ কাকে বলে

বায়ুর চাপ কাকে বলে

বায়ুর চাপ কাকে বলে / বায়ুর চাপ কি

বায়ুর চাপ কাকে বলে

বায়ুমন্ডলীয় চাপ বলতে ওপরের বায়ুর ওজনকে বুঝায়। এটা দীর্ঘ সময় ব্যাপী এক থাকে না। উচ্চতা ভেদে এর তারতম্য ঘটে। আমরা যদিও অনুভব করিনা তবুও বায়ুমন্ডল সর্বদাই চাপ দিচ্ছে। এই বায়ুচাপের কারণে, ভূ-পৃষ্ঠের কয়েকটি অংশে উচ্চচাপ এবং নিম্নচাপ বলয় আকারে ভূ-পৃষ্ঠকে পূর্ব পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে।

গ্যাসীয় অনু কঠিন বা তরল পদার্থের অনুর মত সংঘবদ্ধ বা অবিচল নয়। গ্যাসীয় অনুসমূহ বিক্ষিপ্তভাবে ছোটাছুটি করে এবং মুক্ত চলাচল করতে পারে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পৃষ্ঠস্থ বায়ু ভূ-ত্বকের সাথে লেগে থাকে। এই আকর্ষণের  ফলে গ্যাস মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে না। অর্থাৎ বায়ু নিম্নে সমুদ্র বা স্থলভাগ এবং উর্দ্ধে মহাকর্ষীয় বল দ্বারা পৃথিবীর উপরে আবদ্ধ অবস্থায় আছে। বায়ুর চাপ হচ্ছে ভূ-পৃষ্ঠে প্রতি একক জায়গায় বায়ুর গ্যাসের অনুগুলোর সংঘর্ষের ফলে প্রদত্ত বল। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গ্যাসীয় অনুর গতি বৃদ্ধি পায়। ফলে বায়ুর চাপ বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ চাপ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সমানুপাতিক। আবার চাপ বৃদ্ধি পেলে আয়তন হ্রাস পায় অথবা ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় (ঘনত্ব = ১/আয়তন); অর্থাৎ চাপ ও ঘনত্ব সমানুপাতিক। সুতরাং সাধারণ আদর্শ গ্যাসের সূত্রানুযায়ী বলা যায়:

 চাপ = তাপমাত্রা x ঘনত্ব গুনচিহ্ন ধ্রুবক 

গ্যাসের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা মাপা হয় পরম (Absolute or kelvin) এককে। বায়ুর চাপ এর তাপমাত্রার পরিবর্তন ও ঘনত্বের উপর নির্ভর করে পরিবর্তীত হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আয়তন বৃদ্ধি পায় বলে চাপ কমে যেতে পারে। ফলে বায়ুর চাপ পরিমাপের জন্য ঘনত্বের মান বেশী মাত্রায় প্রভাব ফেলে। তাপমাত্রার বৃদ্ধির সাথে চাপের কি পরিবর্তন হবে তাও ঘনত্বের মান থেকেই জানা যায়।


বায়ুর চাপ বলয়সমূহ 

ভূ-পৃষ্ঠের কয়েকটি অংশে বায়ুর উচ্চচাপ এবং নিম্নচাপ বলয় আকারে ভূ-পৃষ্ঠকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে। একে বায়ু চাপ বলয় বলে। পৃথিবীতে প্রধানত ৭টি চাপ বলয় আছে। যথা

(১) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়; (২ কর্কট ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়; ৩) মকর ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়; ৪) সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়; ৫) কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়; ৬) সুমেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয়; ৭) সুমেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয়।

বায়ু ওপরে নীচে এবং চারপাশে যে চাপ দেয় তাকে বায়ুচাপ বলে। ওপরের বায়ু নীচের বায়ুর ওপর চাপ দেয়। এ কারণে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে চাপ কমতে থাকে। আবার উষ্ণ এবং জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর চাপ কম। যে বায়ুর চাপ বেশী তাকে উচ্চচাপ বায়ু এবং যে বায়ুর চাপ কম তাকে নিম্নচাপ বায়ু বলে।


১) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়

 নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য প্রায় সর্বদাই লম্বভাবে কিরন দেয়। তাই এখানের বায়ু উত্তপ্ত হয়ে উপরে উঠে যায় এবং একটি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি করেছে।

(২-৩) কর্কট ও মকর ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় নিরক্ষীয় উষ্ণ, আর্দ্র ও হালকা বায়ু উপরে উঠে ক্রমশ প্রসারিত ও শীতল হয়ে ২৫-৩৫° উত্তর ও দক্ষিন অক্ষাংশের ক্রান্তিবৃত্তে উপস্থিত হয়ে আংশিকভাবে নীচে নেমে আসে। বাকি বায়ু মেরু প্রদেশের দিকে প্রবাহিত হয়। আবার মেরুদ্বয়ে বায়ুর চাপ বেশী বলে ঐ স্থানের শীতল ও ঘন বায়ু ভূ-পৃষ্ঠ বেয়ে ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে আসতে থাকে। ফলে কর্কট ও মকর ক্রান্তীর নিকট দুই দিক হতে আগত শীতল ও ঘন বায়ুর মিলন হয়। ফলে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে বায়ুচাপের আধিক্য ঘটে এবং উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়।

(৪-৫) মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় পৃথিবীর আবর্তনের জন্য সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত প্রদেশের এলাকা থেকে শীতল বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়ে ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। তখন মেরুবৃত্ত প্রদেশে অর্থাৎ ৬০°-৭০° অক্ষাংশের মধ্যে বায়ুর চাপ হ্রাস পেয়ে নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়।

(৬-৭) মেরুদেশীয় উচ্চ চাপ বলয় উত্তর ও দক্ষিন উভয় মেরুতে অতিরিক্ত শীতের জন্য বায়ু সর্বদাই শীতল ও ভারী থাকে। এছাড়া সূর্যকিরণের অভাবে এই দুই অঞ্চলের বায়ুতে জলীয়বাষ্প কম থাকে। ফলে দুই মেরুতে বায়ুর চাপ উচ্চ হয়। আবার নিরক্ষীয় অঞ্চলের কিছু বায়ু বায়ুর উধ্বস্তর দিয়ে এই দুই অঞ্চলে নেমে আসে। মেরুর আয়তন কম হওয়ায় এরূপ বায়ুর আধিক্য সেখানে বায়ুর চাপ আরও বৃদ্ধি করে। এসব কারণেই মেরুদ্বয়ে উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়।


চাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তন

সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিনায়নের সঙ্গে সঙ্গে চাপ বলয়গুলি যথাক্রমে উত্তরে ও দক্ষিনে ৫-১০° সরে অবস্থান করে।


বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্রের নাম কি

বায়ুচাপ পরিমাপক যন্ত্রের নাম ব্যারোমিটার।


বায়ুচাপ পরিমাপ (Measuring Air Pressure) 

বায়ু চাপ পরিমাপের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় ব্যারোমিটার (Barometer)। দুই ধরণের ব্যারোমিটার ব্যবহৃত হয়। যদিও দ্বিতীয় ধরণের ব্যারোমিটার প্রথম ধরণের ব্যারোমিটারেরই সংস্করণ। ১। পরদ ব্যারোমিটার (Mercurial Barometer) ২। তরলহীন ব্যারোমিটার (Aneroid Barometer)

পৃথিবীর বায়ু চাপ বন্টন (Global distribution of wind pressure) 

সমচাপীয় (Isobaric) রেখা থেকে প্রতীয়মান হয় যে পৃথিবীর বিষুব রেখার উভয় পার্শ্বে অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুচাপ স্বাভাবিক বায়ুচাপের চেয়ে কম। স্বাভাবিক বায়ুচাপ ভূ-পষ্ঠে ১০১৩ মিলিবার ধরা হয়। এক্ষেত্রে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলে চাপের মান মাত্র ১০১১ থেকে ১০০৮ মিলিবার। এই নিম্নচাপ অঞ্চলকে নিরক্ষীয় ফাঁদ (Equatorial Trough) বলে।

৩০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে বায়ুচাপ উচ্চ মাত্রার যার মান ১০২০ মিলিবার। এই উচ্চচাপীয় অঞ্চলকে উপক্ৰান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চল (Subtropical high pressure বলে। দক্ষিণ গোলার্ধে এই উচ্চচাপের কেন্দ্র রয়েছে যাকে উচ্চচাপ সেল (High pressure cell) বলে।

দক্ষিণ গোলার্ধে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের দক্ষিণে আর্কটিক (Arctic) বলয় পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অঞ্চল রয়েছে যাকে উপমেরুদেশীয় নিম্নচাপ বলয় (Sub-arctic low pressure belt) বলে। এটি ৬৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ বরাবর অবস্থিত।

এখানকার চাপ প্রায় ৯৮৪ মিলিবার। মেরু অঞ্চলে সব সময়ই বায়ু উচ্চচাপে থাকে এই অঞ্চলকে বলে মেরুদেশীয় উচ্চচাপ অঞ্চল।

উত্তর গোলার্ধের চাপকেন্দ্র (Northern hemisphere pressure center) স্থল ও জলভাগের অবস্থান বায়ু চাপের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। উত্তর গোলার্ধের বিশাল ভূ-ভাগ যেমন উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়ার মত বিশাল ভূ-ভাগ। আবার বিশাল জলরাশি যেমন- উত্তর আটলান্টিক ও উত্তর গোলার্ধের বায়ুচাপের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। এর ফলে দক্ষিণ গোলার্ধের চাপ বলয়ের চেয়ে উত্তর গোলার্ধে ভিন্নধরণের চাপীয় অবস্থা দেখা যায়। 

শীতকালে উত্তর গোলার্ধের বিশাল ভূ-খন্ডে উচ্চচাপ কেন্দ্র গঠিত হয়। অন্যদিকে সমুদ্র তুলনামূলকভাবে উষ্ণ থাকায় নিম্নচাপ কেন্দ্র গঠিত হয়। উদাহরণ: উত্তর মধ্য এশিয়ার সাইবেরীয় উচ্চচাপ বলয়ে দেখা যায়। এখানে ১০৩০ মিলিবার পর্যন্ত বায়ুচাপ হয়। উত্তর আমেরিকায় অপেক্ষাকৃত কম উচ্চচাপ সমৃদ্ধ কানাডিয়ান উচ্চচাপ লক্ষ্য করা যায়। সমুদ্রে অ্যালিউসিয়ান নিম্নচাপ এবং আইসল্যান্ড নিম্নচাপ অঞ্চলসমূহে শীতকালে ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করে।

গ্রীষ্মকালে বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়। সমুদ্রভাগে উচ্চচাপ ও জলভাগে নিম্নচাপ বিরাজ করে। এশিয়াতে নিম্নচাপ অপেক্ষাকৃত তীব্র হয়। আফগানিস্থানকে ঘিরে এই নিম্নচাপ আবর্তিত হয়। অন্যদিকে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে দুটি ভিন্ন উচ্চচাপ কেন্দ্র তৈরী হয়। এগুলো তাদের শীতকালীন অবস্থান থেকে উত্তরে সরে যায় এবং প্রসারিত হয়। এগুলো এ্যাজোরখ উচ্চচাপ বা বারমুড়া উচ্চচাপ বা হাওয়াইন উচ্চচাপ নামে পরিচিত।

0 comments:

Post a Comment

Comment below if you have any questions

Contact form

Name

Email *

Message *