বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ (Causes of population explosion)
যেকোনো দেশের জনসংখ্যার সাধারণ নিয়ম হচ্ছে তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মানুষের জৈবিক আন্তঃক্রিয়ার পাশাপাশি সামাজিক, ধর্মীয় ও মনস্তাত্ত্বিক মূল্যবোধ বিশেষভাবে সম্পর্কিত। এখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
১। ভৌগোলিক কারণ: ভৌগোলিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত এবং এর আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। | ফলে এ দেশের মানুষ কম বয়সে প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
২। খাদ্যাভ্যাস: বাংলাদেশের মানুষ শ্বেতসার ও আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন ভাত, গম, আলু, মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি গ্রহণে অভ্যস্ত। এ ধরনের খাবার মানুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব অনস্বীকার্য।
৩। জন্ম ও মৃত্যুহারের ব্যবধান: জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে জন্ম ও মৃত্যুহারের ব্যবধান। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্য এবং মানুষের সচেতনতার ফলে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুহার যেমন হাস পেয়েছে, তেমনি মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
৪। বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ: একজন নারী প্রজননক্ষম বয়সের পুরােটাই দাম্পত্য জীবনে অতিবাহিত করলে তার অধিক সন্তান জন্ম দেয়ার সুযোগ অনেক বেশি। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে এবং একাধিক বিয়ে হয় তাহলে তা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৫। দারিদ্র: দরিদ্র মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা কম। স্বামী-স্ত্রীর যৌনতাই তাদের প্রধান বিনোদন। ডি ক্যাস্ট্রো বলেন, “ক্ষুধার্ত মানুষের প্রজনন ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি। বাংলাদেশেও দরিদ্র মানুষ অধিক সন্তান জন্ম দেয়।
৬। নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাব: বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নিরক্ষর, অজ্ঞ, অসচেতন ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। জনসংখ্যার বিরূপ প্রভাব ও কুফল সম্পর্কে তাদের ধারণাও সীমিত। ফলে তারা অধিক সন্তান জন্ম দেয়।
৭। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বা জন্মনিয়ন্ত্রণকে অনেকেই ধর্মীয় মূল্যবোধ পরিপন্থী বলে মনে করে। “মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দিবেন তিনি এ ধরনের মূল্যবোধ জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৮। পুত্র সন্তান লাভের ইচ্ছা: বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় অনেকের কাছে পুত্র সন্তানের গুরুত্ব বেশি। ফলে পুত্র সন্তান। লাভের আশায় অনেকে ৩/৪ টি কন্যাসন্তানের পর ৫ম সন্তান জন্ম দিচ্ছে- যা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
৯। নারী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাব: বাংলাদেশে শিক্ষিত, সচেতন এবং কর্মজীবী নারীর সংখ্যা এখনো অপ্রতুল। ফলে তাদের অনেকেরই অল্প বয়সে বিয়ে হয়। সচেতনতা ও সক্ষমতার অভাবে তারা বেশি সন্তানের জন্ম দেয়।
১০। চিত্তবিনোদনের অভাব: দেশে স্বল্প কিংবা বিনা খরচে সুস্থ বিনোদনের অভাব রয়েছে। ফলে দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষ যৌন সম্পর্ক স্থাপনকেই তাদের চিত্তবিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়। যার ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
১১। নারীর শিক্ষা, সচেতনতা ও ক্ষমতায়নের অভাব: বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে নারীর শিক্ষা, সচেতনতা ও ক্ষমতায়নের অভাব। অধিক সন্তান ধারণ ও জন্মদানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অনেক নারী সচেতন নন। আবার জন্ম-নিরােধ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও অনেক নারী স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions