Home » » বাংলাদেশের কৃষির উপখাত গুলো কি কি

বাংলাদেশের কৃষির উপখাত গুলো কি কি

বাংলাদেশের কৃষির উপখাত গুলো কি কি

বাংলাদেশের কৃষির উপখাতসমূহ: 

বাংলাদেশের কৃষিখাত তিনটি প্রধান উপখাত নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো: (ক) শস্য ও শাক-সবজি, (খ) প্রাণিসম্পদ ও (গ) বনজ সম্পদ। কিন্তু সার্বিক কৃষি খাতের মধ্যে মৎস্য সম্পদকে একটি উপখাত হিসেবে গণ্য করা যায়।

(ক) শস্য ও শাক-সবজি (Crops and vegetables) : এটি বাংলাদেশের কৃষির সর্ববৃহৎ উপখাত। এ খাতে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য শস্য যেমন ধান, গম, ভুট্টা, ডাল, তৈলবীজ, বাদাম, পিয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ এবং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি যেমন লাল শাক, পালং শাক, পটল, ঢেরস, করলা, লাউ, বেগুন, শসা, টমেটো, কপি ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। তাছাড়া এ উপখাতে বিভিন্ন ধরনেরর অর্থকারী ফসল যেমন পাট, চা, আখ, তামাক, রেশম, তুলা, রবার ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। দেশের লোকদের খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও এ উপখাতে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। বর্তমানে এদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের শতকরা ১২.২৭% ভাগ শস্য ও শাক- সবজি উপখাতের সৃষ্টি।


(খ) প্রাণিসম্পদ (Livestock): গৃহে পালিত নানাজাতীয় পশু-পাখি নিয়েই বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ উপখাত গঠিত। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া,হাঁস-মুরগি, কবুতর প্রভৃতি এদেশের প্রাণিসম্পদের অন্তর্ভূক্ত। প্রাণি সম্পদ থেকে প্রাপ্ত মাংস, দুধ, ডিম, ইত্যাদি মানব দেহের অত্যাবশ্যকীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করে। তাছাড়া চাষাবাদ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, চামড়া ও চমড়া জাতীয় দ্রব্যদি উৎপাদন ও রপ্তানিতে এ উপখাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।


(গ) বনজ সম্পদ(Forest Resources ): এটি আমাদের কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপখাত। বাংলাদেশের মোট ভূখন্ডের শতকরা প্রায় ১৭ ভাগ জুড়ে বন রয়েছে। বনে সুন্দরি, গড়ান, গেওয়া, কেওড়া, শাল, গর্জন, গামাড়ি, গোলপাতা প্রভৃতি গাছ জন্মে। এগুলো থেকে দেশের কাঠের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ হয় এবং কয়েকটি শিল্পের কাঁচামালের যোগান আসে। জ্বালানি কাঠ, বাঁশ, বেত, মোম, মধু, বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, ইত্যাদি এ উপখাত থেকে পাওয়া যায় ।


(ঘ) মৎস্য সম্পদ(Fisheries) : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের বিপুল সম্ভাবনা থাকায় বাংলাদেশ সরকার একে একটি পৃথক খাত হিসেবে গণ্য করেছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় এ খাতও কৃষিখাতের অন্তর্ভূক্ত। বাংলাদেশের


অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও দেশের সামুদ্রিক মৎস্য ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাছ আহরিত হয়। বর্তমানে দেশের জিডিপিতে মৎস্য সম্পদের অবদান হলো ৩.৬৯ শতাংশ ।


জিডিপিতে কৃষির উপখাত সমূহের অবদান

Contribution of the sub-sectors of Agriculture along with Fishery in GDP

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় এখানকার অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। অবশ্য সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এ দেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ক্রমশ কমে আসছে। তাই দেখা যায় যে, বিগত শতকের সত্তরের দশকে এ দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ যা ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় শতকরা প্রায় ৩৭ ভাগে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে সমন্বিত কৃষিখাতের অবদান ধরা হয় শতকরা ১৫.৯৬ ভাগ। অর্থাৎ পূর্বের তুলনায় বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে কৃষিখাতের অবদান অনেক কমে এসেছে। দেশে শিল্প, সেবা ও ব্যবসা ক্রমেই উন্নত হওয়ায় এমনটি হয়েছে। জিডিপিতে কৃষির উপখতগুলোর অবদানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট তারতম্য দেখা যায়। উপখাত গুলোর মধ্যে শস্য ও শাক-সবজি উপখাতের অবদান সবচেয়ে বেশি। তারপর রয়েছে প্রাণিসম্পদ ও বনজসম্পদ উপখাত;সার্বিক বিবেচনায় মৎস্য খাতের অবদান প্রাণিসম্পদ ও বনজ সম্পদ উপখাত থেকে বেশি। 

নিচের সারনি ও লেখচিত্রে বিগত কয়েকবছরের জিডিপিতে মৎস্য খাতসহ কৃষির উপখাতগুলো দেখানো হলো:

বাংলাদেশের-কৃষির-উপখাত

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *