বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র শিল্পের অবদান
জনবহুল ও স্বল্প আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র শিল্পের গুরুত্ব বা সুবিধা আপেক্ষিকভাবে বেশি। এ দেশে বিপুল পুঁজি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃহৎ শিল্পের দ্বারা যে মূল্য সংযোজন ও কর্মসুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব, ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসার ও উন্নয়নের মাধ্যমে তার চেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করা হয়। এ জন্য সাম্প্রতিক শিল্পনীতিতে দেশে ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র শিল্পের গুরুত্ব বা সুবিধা নিম্নোক্তভাবে উল্লেখ করা যায়:
১। উপজাত দ্রব্যের ব্যবহার: বিভিন্ন প্রকার ক্ষুদ্র শিল্পে গড়ে উঠলে বৃহৎ শিল্পের কিছু কিছু উপজাত দ্রব্যের ব্যবহার সম্ভব হয়।
২। মহিলাদের জন্য কর্মসূযোগ: বিশেষ ধরনের দক্ষতার অভাবে বড় শিল্পে নারীদের কর্মসংস্থানের সূযোগ সীমিত। এক্ষেত্রে দেশের সর্বত্র শিল্প গড়ে উঠলে দক্ষ ও কম দক্ষ নারীদের জন্য কর্মসুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
৩। দেশজ কাঁচামালের ব্যবহার: বাংলাদেশে ফলমূল, পাট, চামড়া, চা, কাঠ ও অন্যান্য উপকরণ প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় । ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে এসব দেশজ কাঁচামালের উপযুক্ত ব্যবহার করা যায় ।
৪ । কৃষি-বহির্ভূত খাতে কর্মসূযোগ: বাংলাদেশে কৃষি-বহির্ভূত খাত হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ক্ষুদ্র শিল্পে অনেক রকম পণ্য উৎপাদন করা যায়। ফলে এক দিকে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়এবং অন্যদিকে কৃষিখাত থেকে শিল্পখাতের অতিরিক্ত শ্রমশক্তির স্থানান্তর ঘটে ।
৫। শ্রম ঘন উৎপাদন: ক্ষুদ্র শিল্পে শ্রম নিবিড় প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। তাই এ শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি ।
৬। ধন বৈষম্য হ্রাস: ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসার ঘটলে দেশের শিল্প মালিকানায় বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে। ফলে দেশে আয় ও সম্পদ বন্টনের অসমতা কিছুটাও হলেও কমতে পারে ।
৭। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: কোনো কোনো বৃহৎ শিল্পের কিছু কিছু উপকরণ ক্ষুদ্র শিল্পে উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে ব্যবহারযোগ্য বোতাম, সুতা, লেবেল, কার্টুন, প্রভৃতি ক্ষুদ্র শিল্পে তৈরি হয়।
৮। আমদানি নির্ভরতা হ্রাস: ক্ষুদ্র শিল্পের ব্যপক প্রসার ঘটলে বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার ভোগ্য পণ্যের চাহিদা পূরণ হবে। ফলে আমদানি নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে।
৯। ভোক্তাদের বহুমুখী চাহিদা পূরণ: বিভিন্ন রকম ক্ষুদ্র শিল্পে যে বিভিন্ন প্রকার পণ্য উৎপাদিত হয় তা ভোক্তাসাধারণের বৈচিত্র্যপূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
১০। শ্রমিকের সহজপ্রাপ্যতা: অধিকাংশ ক্ষুদ্র শিল্পে অত্যাধুনিক ও জটিল যন্ত্রপাতির ব্যবহার থাকে না। তাই এসব শিল্পে দেশের সহজলভ্য শ্রমিক সহজেই নিয়োগ করা যায়।
এসব কারণে দেশের সমগ্র শিল্প কাঠামোর মধ্যে ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়নে যথাযথ গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা প্রয়োজন ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions