হাদিস কত প্রকার কি কি
হাদিস কত প্রকার কি কি সেগুলো নিম্নে দেয়া হলো:
সংজ্ঞা হিসেবে হাদিস ৪ প্রকার
রাসূলুল্লাহ (স) যে সব বক্তব্য দিয়েছেন তাঁর দ্বারা যে সব কর্ম সম্পদিত হয়েছে এবং তিনি সাহাবাগণের যেসব কথা, কাজ অনুমোদন করেছেন সবই হাদিস। আর রাসূলের (স) হাদিস সবই সহীহ, কিন্তু সনদ ও বর্ণনাকারীদের সংখ্যা, গুণাগুণ ও বর্ণনার ধারাবাহিকতা ইত্যাদির বিবেচনায় মুহাদ্দিসগণ হাদিসকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এ শ্রেণীবিভাগের ফলে হাদিসের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়েছে; হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা স্পষ্ট হয়েছে। উপরিউক্ত সংজ্ঞার আলোকে মুহাদ্দিসগণ হাদিসকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
১. কাওলি হাদিস
মহানবী (স)-এর পবিত্র মুখনিঃসৃত বাণীকে কাওলি হাদিস বা বক্তব্যমূলক হাদিস বলা হয়। যেমন-‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ' ।
২. ফি'লি হাদিস
মহানবী (স) স্বয়ং যে সকল কর্মকাণ্ড করেছেন এবং কোন সাহাবি তা বর্ণনা করেছেন, তাকে 'ফি'লি হাদিস' বা কর্মমূলক হাদিস বলা হয় । যথা : 1 is - 35 "রাসূল (স) এরূপ করেছেন।”
৩. তাকরীরী হাদিস
সাহাবীগণ মহানবীর (স) সম্মুখে শরীআত সম্বন্ধে কোন কথা বলেছেন অথবা কোন কাজ করেছেন এবং রাসূল (স) তার প্রতিবাদ করেননি অথবা নীরব থেকে মৌন সম্মতি জানিয়েছেন তাকে তাকরীরী হাদিস বা অনুমোদন মূলক হাদিস বলা হয় । যেমন- কোন সাহাবি বলেছেন : “আমরা রাসূলুল্লাহর (স) উপস্থিতিতে এরূপ কাজ করেছি ইত্যাদি।”
৪. হাদিসে কুদসী
এই তিন প্রকার হাদিস ব্যতীত আরো এক প্রকার হাদিস আছে, যা মহানবী (স) গোপন ওহিরূপে আল্লাহর নিকট হতে সরাসরি বর্ণনা করতেন; যার ভাষা ছিল রাসূলের, কিন্তু ভাব আল্লাহর- একে 'হাদিসে কুদসী' বলা হয়। যেমন-
قَالَ رَسُولُ اللهِ - قَالَ اللهُ تَعَالَى: الصَوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ
রাসূল (স) বাণী প্রদান করেন : মহান আল্লাহ বলেছেন- “রোযা আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।”
সনদ হিসেবে হাদিস ৩ প্রকার
সনদ বা রাবী পরম্পরার দিক থেকে হাদিসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) মারফূ :
যে সব হাদিসের বর্ণনা পরম্পরা রাসূলুল্লাহ (স) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মারফু হাদিস বলা হয়।
(খ) মাওকুফ :
যে সব হাদিসের বর্ণনা সূত্র সাহাবি পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মাওকুফ হাদিস বলা হয়।
(গ) মাকতূ :
যে সনদ সূত্রে কোন তাবিঈর কথা, কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাকতূ হাদিস বলা হয়।
বর্ণনাকারীর (রাবী) সংখ্যা হিসেবে হাদিস ২ প্রকার
যথা-
১. মুতাওয়াতির হাদিস
মুতাওয়াতির অর্থ একের পর এক পর্যায়ক্রমে আসা, বিরামহীন বা অনবরত। হাদিসে মুতাওয়াতির হল এমন হাদিস- যার বর্ণনাকারী রাবীর সংখ্যা প্রত্যেক যুগে ও প্রত্যেক স্তরে এত বেশি যে, তাদের সকলের ওপর একযোগে মিথ্যার ওপর ঐকমত্য হওয়া অসম্ভব।
২. আহাদ হাদিস
যে হাদিসের বর্ণনাকারীর সংখ্যা প্রত্যেক যুগে এক, দুই অথবা তিনজন তাকে আহাদ হাদিস বলে। এ শ্রেণীর হাদিস দ্বারা ইলমে যত্নী ‘ধারণামূলক জ্ঞান' হাসিল হয়। ইমাম আবু হানিফার (র) মতে, এ জাতীয় হাদিস দ্বারা আমল করা ওয়াজিব হয় । ইমাম আহমদ (র) বলেন, এর দ্বারা ইলম ও আমল উভয়ই ওয়াজিব হয়।
আহাদ হাদিস ৩ প্রকার
১. মাশহুর হাদিস
মাশহুর অর্থ প্রসিদ্ধ, পরিচিত। যে হাদিসের বর্ণনাকারীদের সংখ্যা সাহাবিদের পরবর্তী স্তরসমূহের কোন স্তরে যদি তিনজন হতে কম না হয়, তবে এরূপ হাদিসকে হাদিসে মাশহুর বলা হয়। এ প্রকার হাদিসকে হাদিসে মুস্তাফিযও বলা হয় ।
২. হাদিসে আযীয
আযীয শব্দটির অর্থ কম হওয়া, মজবুত ও শক্তিশালী বা বিজয়ী হওয়া। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় হাদিসে আযীয বলা হয় এমন হাদিসকে, যার বর্ণনাকারী সংখ্যা প্রত্যেক যুগে কম পক্ষে দু'জন, এ ধরনের হাদিস দ্বারা আত্মতৃপ্তিমূলক জ্ঞান অর্জিত হয়।
৩. হাদিসে গরীব
গরীব শব্দের অর্থ স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন, দূরবর্তী ও দুষ্প্রাপ্য। পরিভাষায় এমন হাদিসকে হাদিসে গরীব বলা হয়, যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা কোন স্তরে মাত্র একজন। এ ধরনের হাদিস গ্রহণযোগ্য এবং শরীআতে দলিলযোগ্য হবে।
রাবীর বিশুদ্ধতার বিচারে মুত্তাসিল হাদিস তিন প্রকার
(ক) সহীহ হাদিস
'সহীহ' মানে বিশুদ্ধ। যে মুত্তাসিল হাদিসের সনদের প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ ‘আদালত' ও 'যাবত' গুণ-সম্পন্ন এবং হাদিসটি যাবতীয় দোষ-মুক্ত, তাকে সহীহ হাদীস বলা হয়।
(খ) হাসান হাদিস
হাসান মানে উত্তম, সৌন্দর্য। যে হাদিসের রাবীর ‘যাবত' ( স্মরণ শক্তি) গুণে পরিপূর্ণতা য় ঘাটতি রয়েছে তাকে হাসান হাদীস বলে । ফিক্হবিদগণ শরীআতের বিধান নির্ণয়ে ও আইন প্রণয়নে সহীহ ও হাসান হাদিস গ্রহণ করেন ।
(গ) যয়ীফ হাদিস
যয়ীফ মানে দুর্বল। পরিভাষায় যয়ীফ হাদিস বলা হয় এমন হাদিসকে, যে হাদিসের কোন রাবী সহীহ ও হাসান হাদিসের রাবীর গুণসম্পন্ন নয়। রাবীর দুর্বলতার কারণেই হাদীসটিকে যয়ীফ বলা হয়। নাউযুবিল্লাহ মহানবি (স) এর কোন কথাই যয়ীফ নয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions