সনেট কাকে বলে
সনেট শব্দটি ইতালিয়ান ‘সনেটা’ শব্দ থেকে উদ্ভূত। একটিমাত্র অখ- ভাবকল্পনা বা অনুভূতিকণা যখন ১৪ অক্ষর সমন্বিত চতুর্দশ পংক্তিতে একটি বিশেষ ছন্দরীতিতে আত্মপ্রকাশ করে তখন তাকে সনেট নামে অভিহিত করা হয়। সনেটের জনক হলেন ইতালিয়ান কবি পেত্রার্ক (১৩০৪-১৩৭৪)। চতুর্দশ শতকে তিনি সনেট কাব্য রচনা করেন। এতে মোট ১৪টি পদ থাকে। প্রথম ৮ পদকে অষ্টক (octave); এবং শেষ ৪ পদকে ষট্ক বলে। সনেটে প্রথম ৮ পংক্তিতে একটি ভাবকল্পনার ইঙ্গিত করা হয়, এবং শেষ ৬ পংক্তিতে সেই ভাবকল্পনার বিস্তৃতি ঘটানো হয়। ইতালিয়ান কবি পেত্রার্ক, দামেত্ম, ট্যাসো ছাড়াও ইংরেজি সাহিত্যে শেক্সপিয়র, মিল্টন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কিটস্ প্রমুখ কবি বিখ্যাত সনেট রচনা করেছেন। বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রথম সনেট রচনা করেন। তিনি ১৪ অক্ষরই বাংলা সনেটের জন্য নির্ধারিত করেছিলেন। এ ছাড়াও প্রমথ চে․ধুরী, মোহিতলাল মজুমদার ও ফররম্নখ আহমদ সনেট রচনা করেছেন।
সনেটের গঠনরীতি
১। এটি ১৪ অক্ষর (কখনো ১৮ অক্ষর) সম্বলিত চতুর্দশ পঙ্ক্তির কবিতা
২। এতে একটিমাত্র ভাবের দ্যোতনা থাকে
৩। অষ্টক ষটকের বিভাগ থাকে, তবে পরবর্তীতে অনেকে এই নিয়ম মেনে চলেন নি।
৪। এতে ভাবের গভীরতা এবং ভাষার ঋজুতা থাকবে।
৫। বিশেষ গঠনরীতি অনুসৃত হওয়ার কারণে অন্যান্য গীতিকবিতার তুলনায় এতে স্বতঃস্ফূর্ততা অপেক্ষাকৃত কম। সনেটে সাধারণভাবে অষ্টক ও ষটকে অমত্ম্যমিল বিন্যাসের নিয়ম অনুসরণ করা হয়ে থাকে। বিশেষত পেত্রার্কের সনেট রূপকল্পে এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যায় না। অষ্টকে অমত্ম্যমিল ক খ খ ক ক খ খ ক। ষট্কে অন্ত্যমিলে কিছুটা স্বাধীনতা দেখা যায়। যেমন, গখগ ঘগঘ অথবা, গঘঙ গঘঙ অথবা গখঘ গগঘ। লক্ষণীয়, শেষ দুটি চরণে কোনো প্রকার অমত্ম্যমিল থাকে না।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions