তেলাওয়াতে সিজদা
* কুরআন শরীফে মোট ১৪টি সাজদার আয়াত আছে; এগুলো পাঠ করলে বা শ্রবণ করলে সাজদা দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়। একে সাজদায়ে তিলাওয়াত বা তিলাওয়াতের সাজদা বলে। উক্ত ১৪টি আয়াত এই:
১. সূরা আ'রাফ (৯ম পারা)-এর শেষ আয়াত। আয়াত নং ২০৬।
২. সূরা রা'দ (১৩শ পারা)-এর ১৫ নং আয়াত।
৩. সূরা নাহল (১৪শ পারা)-এর ৫০ নং আয়াত।
৪. সূরা বনী ইসরাঈল (১৫শ পারা)-এর ১০৯ নং আয়াত।
৫. সূরা মারইয়াম (১৬ শ পারা)-এর ৫৮ নং আয়াত ।
৬. সূরা হজ্জ (১৭শ পারা)-এর ১৮ নং আয়াত ।
৭. সূরা ফুরকান (১৯শ পারা)-এর ৬০ নং আয়াত ।
৮. সূরা নাম্ল (১৯শ পারা)-এর ২৬ নং আয়াত।
৯, সূরা সাদা (২১ তম পারা)-এর ১৫ নং আয়াত।
১০. সূরা সাদ (২৩ তশ পারা)-এর ২৪ নং আয়াত ।
১১. সূরা হা মীম সাজদা (২৪ তম পারা)-এর ৩৮ নং আয়াত ।
১২. সূরা নাজুম (২৭ তম পারা)-এর শেষ আয়াত (৬২ নং আয়াত)।
১৩. সূরা ইনশিকাক (৩০ তম পারা)-এর ২১ নং আয়াত।
১৪. সূরা আলাক (৩০ তম পারা)-এর শেষ আয়াত।
* সাজদায়ে তিলাওয়াতের নিয়ম এই যে, নামাযের ন্যায় পাক পবিত্র অবস্থায় কেবলামুখী হয়ে আল্লাহু আকবার বলে একটি সাজদা করবে, সাজদায় তিনবার সাজদার তাসবীহ পড়ে আবার আল্লাহু আকবার বলে উঠবে। হাত উঠাতে বা বাঁধতে হবে না। না দাঁড়িয়ে বসে বসেও এই সাজদা করা যায় বা | দাঁড়িয়ে সাজদায় গিয়ে সাজদা করে বসে থাকলেও দুরস্ত আছে। শয্যাশায়ী রোগী নামাযের সাজদায় যেরূপ ইশারা করে এই সাজদাও দ্রুপ ইশারায় করলেই আদায় হয়ে যাবে।
* সাজদার আয়াত তিলাওয়াত বা শ্রবণের সময় উযূ না থাকলে পরে যখন উযূ করবে তখন সাজদা করে নিলেও আদায় হয়ে যাবে। উষ্য থাকলেও পরে আদায় করে নেয়া যায়, তবে উষ্য থাকলে সাজদার আয়াত তিলাওয়াত বা শ্রবণের সাথে সাথে সাজদা করে নেয়া উত্তম।
* যে সমস্ত তিলাওয়াতের সাজদা আদায় করা হয়নি, মৃত্যুর পূর্বে সেই সমস্ত সাজদা আদায় করে নিতে হবে; নতুবা গোনাহগার হতে হবে।
* হায়েয নেফাস অবস্থায় সাজদার আয়াত শুনলে সাজদা ওয়াজিব হয়। । কিন্তু গোসলের হাজতের অবস্থায় বা হায়েয নেফাস থেকে পাক হয়ে গোসলের পূর্বাবস্থায় সাজদার আয়াত শুনলে সাজদা ওয়াজিব হবে।
* নামাযের মধ্যে সাজদার আয়াত পড়লে সাজদার আয়াত পড়া মাত্র নামাযের মধ্যেই তৎক্ষণাৎ সাজদা করে নিতে হবে। তৎক্ষণাৎ সাজদা না করে এক দুই আয়াত আরও পড়ার পর সাজদা করলেও দুরস্ত আছে। কিন্তু আরও বেশী পড়ার পর সাজদা করলে সাজদা আদায় হবেনা গোনাহগার হতে হবে।
* নামাযের মধ্যে সাজদার আয়াত পড়ে নামাযের মধ্যে সাজদা না করলে নামাযের বাইরে এই সাজদা আদায় করলে আদায় হবে না । চিরকালের জন্য পাপী থাকতে হবে। এর জন্য এস্তেগফার করতে হবে।
* নামাযের মধ্যে সাজদার আয়াত পড়ে তৎক্ষণাৎ যদি রুকূতে চলে যায় এবং রুকূর মধ্যে সাজদায়ে তিলাওয়াতেরও নিয়ত করে, তাতেও সাজদা আদায় হয়ে যাবে। আর রুকূতে অনুরূপ নিয়ত না করলে তারপর যখন সাজদা। করবে তখন নিয়ত না করলেও তিলাওয়াতের সাজদা আদায় হয়ে যাবে।
* নামাযের মধ্যে অন্য কারও সাজদার আয়াত পড়তে শুনলে নামাযের মধ্যে সাজদা করবে না, নামাযের পরে সাজদা করবে। নামাযের মধ্যে করলেও তা আদায় হবে না, উপরন্তু পাপ হবে।
* এক জায়গায় বসে একটি সাজদার আয়াত বারবার পড়লে বা শুনলে একটি সাজদাই ওয়াজিব হয়, শর্ত হল মজলিস এক থাকতে হবে- মজলিস পরিবর্তন হলে হুকুম পরিবর্তন হয়ে যাবে। দুনিয়াবী কথাবার্তা বা কাজ দ্বারা মজলিস পরিবর্তন হয়েছে ধরা হবে। এক জায়গায় বসে একাধিক সাজদার। আয়াত পড়লে বা শুনলে যত আয়াত তত সাজদা ওয়াজেব হবে।
* রেডিও, টেপরেকর্ডার ও গ্রামোফোনে সাজদার আয়াত তিলাওয়াত শুনলে সাজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় না।
* সমস্ত সূরা পাঠ করা এবং সাজদা থেকে বাঁচার জন্য শুধু সাজদার আয়াত বাদ দিয়ে যাওয়া মাকরূহ ও নিষিদ্ধ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions