স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলো কি কি
প্রবাদ আছে “স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা বেশি কঠিন”। ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে শুরু করে জাতীয় স্বাধীনতা, সব ধরনের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যই যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম করতে হয়। জাতীয় স্বাধীনতা লাভের পর দেখা যায় অন্যান্য স্বাধীনতার সংগ্রাম বিদ্যমান। রাষ্ট্রের প্রাণ যেমন জাতীয় স্বাধীনতা, তেমনি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হল ব্যক্তি স্বাধীনতা। গণতন্ত্রই ব্যক্তিকে সর্বাধিক স্বাধীনতা দিয়ে থাকে।
স্বাধীনতা রক্ষা করার কয়েকটি উপায় নিচে আলোচনা করা হল:
১। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা: প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশ গ্রহণ থাকে। এখানে জনগণের ইচছার একটি প্রতিফলন দেখা যায়। ফলে সরকার বা শাসকশ্রেণী জনগণের অধিকার, বাক-স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করাসহ অন্যান্য সকল অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকে। প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত না করা হচ্ছে নাগরিকের দায়িত্ব। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় অন্য যেকোন ব্যবস্থার চেয়ে স্বাধীনতা বেশি নিশ্চিত হয়।
২। সংবিধান মান্যতা: সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনগণের অধিকারের দলিল। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা হলে জনগণের স্বাধীনতা সহজেই নিশ্চিত হয়। যেমন, বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ে জনগণের অনেক অধিকার ও স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। সরকার যদি সংবিধান মান্য করে তাহলে স্বাধীনতা খর্ব হবার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
৩। আইনের শাসন: আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। একজন অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। আবার অভিযুক্ত ব্যক্তিরও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের পূর্ণ অধিকার আছে। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ সকল পক্ষের উর্ধ্বে থেকে বিচারকার্য পরিচালনা করবে।
৪। ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি: রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তিনটি বিভাগ আছে। এগুলো হচ্ছে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। এই তিনটি বিভাগ যদি স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে নিজ-নিজ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয় তাহলে আশা করা যায় যে রাষ্ট্রের নাগরিকেরা তাদের প্রাপ্য স্বাধীনতাগুলো ভোগে সক্ষম হবে। উদাহরণস্বরূপ শাসন বিভাগ যদি বিচার বিভাগের কাজের উপর হস্তক্ষেপ করে তবে একজন নাগরিক ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারে এবং তার স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে। তাই রাষ্ট্রের তিন বিভাগ ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে পৃথকভাবে সক্রিয় থাকা একান্ত প্রয়োজন।
৫। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: বিচার বিভাগ একটি রাষ্ট্রের প্রাণস্বরূপ। নাগরিকের শেষ ভরসার আশ্রয়স্থল হল বিচার বিভাগ। আশা করা হয় যে অন্য কোন বিভাগ থেকে কেউ যদি ন্যায় বঞ্চিত হয়ও বিচার বিভাগ অবশ্যই ন্যায় বিচার করবে। কিন্তু বিচার বিভাগ যদি স্বাধীনভাবে কাজ না করতে পারে তবে এই বিভাগটি দুর্বল হয়ে যায়।
৬। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: চরম ক্ষমতা চরমভাবে নষ্ট হয়। অর্থাৎ সকল ক্ষমতা এক স্থানে কেন্দ্রীভূত থাকলে নাগরিকের স্বাধীনতা বিনষ্ট হবার আশঙ্কা থাকে। তাই উন্নত দেশগুলোতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না করে স্থানীয়ভাবে বন্টন করে দেয়া হয়। এর ফলে নাগরিকগণ অধিকতর সেবা পেয়ে থাকে এবং সরকারী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ লাভ করে।
৭। সুশাসন: সুশাসন স্বাধীনতা রক্ষার অন্যতম কবচ। সুশাসন হল নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রযন্ত্রের সুষ্ঠু পরিচালনা। রাষ্ট্রে সুশাসন থাকলে স্বাধীনতা রক্ষা করায় নাগরিককে খুব বেশি বিচলিত হতে হয় না।
৮। জনমত: জনমত স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। যৌক্তিক ও সুষ্ঠু জনমত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ করে না এবং নাগরিকের ক্ষতিও কামনা করে না। ফলে স্বাধীনতা রক্ষা হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন থাকলেই তা সব সময় জনমত হয় না। জনমতের সাথে অবশ্যই জনকল্যাণ যুক্ত থাকতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, স্বাধীনতা লাভ করা গেলেও অনেক সময় সে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা একজন ব্যক্তির স্বাধীনতা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আইনসিদ্ধ স্বাধীনতা অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অনেকগুলো উপাদান কাজ করে। যেমন- গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সংবিধান মান্যতা, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ক্ষমতার পৃথকীকরণ, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা স্বাধীনতা সংরক্ষণের প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions