Home » » সাম্য কি

সাম্য কি

সাম্য কি

সাম্য শব্দটি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রাচীন গ্রীসের নগররাষ্ট্র প্রসঙ্গে প্লেটোর লেখনীতেও সাম্যবাদের কথা পাওয়া যায়। প্লেটোর সাম্যের ধারণা অবশ্য আধুনিক ধারণা থেকে ভিন্ন। আধুনিকযুগে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলোপ করে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন কার্ল মার্কস। অষ্টাদশ শতাব্দীতে জন লক, রুশোর মতো চিন্তাবিদদের লেখালেখি এবং আমেরিকার স্বাধীনতা ও ফরাসি বিপ্লব এর মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে সমাজে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠতে থাকে। ফরাসি বিপ্লবের মূল কথাই ছিল সাম্য। সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ব এই তিনটি বিষয় প্রতিষ্ঠা করা ছিল ফরাসি বিপ্লবের মূল্য লক্ষ্য। বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে সাম্য বলতে মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের উপযোগী সুযোগ-সুবিধা সমানভাবে পাওয়াকে বুঝায়।

উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা লাভ করাকে বুঝায়। অধ্যাপক হ্যারল্ড লাস্কির মতে, সকলের সম্মুখে যথার্থ সুযোগ-সুবিধার দ্বার উন্মুক্ত রাখার অর্থ হল সাম্য। অর্থাৎ, সাম্য বলতে এমন একটি অবস্থা বা পরিবেশ বুঝায় যেখানে সকল নাগরিক সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করে যথার্থভাবে নিজেদের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়।


সাম্যের প্রকারভেদ 

সাম্য বিভিন্ন রকমের হতে পারে । যথাঃ (ক) সামাজিক সাম্য (খ) রাজনৈতিক সাম্য (গ) অর্থনৈতিক সাম্য (ঘ) আইনগত সাম্য 


ক) সামাজিক সাম্য

সামাজিক সাম্য হচ্ছে এমন একটি পরিস্থিতি যখন কোন একটি সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তি বিশেষ কতগুলো ক্ষেত্রে সমান সুযোগ ভোগ করে। বাক-স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ কিংবা নাগরিক অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ লাভ করতে পারাটা সামাজিক সাম্যের নির্দেশক।


খ) রাজনৈতিক সাম্য 

প্রত্যেক নাগরিক রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এইসব সুযোগ-সুবিধা লাভ করাই রাজনৈতিক সাম্য। সংগঠন করার স্বাধীনতা, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এর সুবিধা, ভোটাধিকার ইত্যাদি রাজনৈতিক সাম্যের পর্যায়ে পড়ে। রাজনৈতিক সাম্য না থাকলে রাষ্ট্রে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে। 


গ) অর্থনৈতিক সাম্য 

অর্থনৈতিক সাম্য বলতে সাধারণভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদে প্রত্যেকের সমান সুযোগ থাকা বােঝায়। পছন্দমত পেশা নির্বাচন, পেশা পরিবর্তন, যোগ্যতা অনুযায়ী পেশা গ্রহণের মত বিষয়গুলি অর্থনৈতিক সাম্যের নির্দেশক। অর্থনৈতিক সাম্যের মাত্রার উপরেই একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অনেকাংশে নির্ভর করে।


ঘ) আইনগত সাম্য 

ইতোপূর্বে আলোচিত সাম্যের কিছু কিছু আবার আইনের দ্বারা স্বীকৃত। যেমন, চাকুরিতে সমান সুযোগ লাভের অধিকার, সংগঠন ও সমাবেশ করার অধিকার। বাংলাদেশের মত দেশে আইনগত সাম্য সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। সংবিধান ছাড়াও দেশের বিদ্যমান অন্যান্য আইন দ্বারাও সাম্য স্বীকৃত হতে পারে। আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য আইনের সাম্য থাকা উচিত।


পরিশেষে বলা যায়, সাম্য বলতে এমন একটি অবস্থা বা পরিবেশ বুঝায় যখন রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করার মাধ্যমে নিজেদের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। সাম্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত হতে পারে। সাম্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *