Home » » মাদকাসক্তি কি

মাদকাসক্তি কি

মাদকাসক্তি কি (What is drug addiction) 

মাদকাসক্তি সমাজের জন্য এক অভিশাপ। কোনো পরিবারে মাদকাসক্ত ব্যক্তির উপস্থিতি থাকলে কেবল তারাই এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারে। মাদকাসক্তি একটি সমাজে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় ডেকে আনতে পারে। তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তারা তাদের কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে। তখন আর ওই সমাজ সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথে অগ্রসর হতে পারে না। ফলে যেকোনো সমাজের জন্যই মাদকাসক্তি একটি সমস্যা। এর থেকে উত্তরণের জন্য সামাজিক সচেতনতা ও সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টা প্রয়োজন। 

মাদক দ্রব্যের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে মাদকাসক্তি । বিভিন্ন ব্রান্ডের তরল মদ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিককালের হিরোইন, ইয়াবাসহ এলকোহল সমৃদ্ধ যে কোনো দ্রব্যের প্রতি অনিয়ন্ত্রিত আসক্তি বা আগ্রহকে মাদকাসক্তি বলে। গাঁজা, চরস যেমন নেশাদ্রব্য হিসেবে পরিচিত এবং ব্যবহৃত হয় তেমনি ফেনসিডিলসহ কিছু ঔষধও নেশাদ্রব্য হিসেবে বহুলপ্রচলিত। পথশিশু বা বস্তির দরিদ্র ছেলে-মেয়েরা অনেকসময় পলিথিনের মধ্যে জুতার আঠা লাগিয়ে নেশা করে। টিকটিকির লেজ পুড়িয়েও নেশার কথাও শোনা যায়। উপকরণ যা ই হোক না কেনো, কোনো কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নেশাদ্রব্য গ্রহণের বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তাকে মাদকাসক্তি বলে অভিহিত করা যায়। মাদকদ্রব্যে আসক্ত ব্যক্তি একসময় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করে। সাধারণত যে যে দ্রব্যে আসক্ত হয়, সে ওই দ্রব্যটি গ্রহণেই তৎপর থাকে। মাদকে আসক্ত ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট উপকরণের পাশাপাশি প্রায়শ সময়, স্থান এমনকি সঙ্গীও নির্দিষ্ট থাকে।

কোনো ব্যক্তি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়লে তার মধ্যে কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায়। পরিবার ও বন্ধু-স্বজনদের সচেতন পর্যবেক্ষণে এসব উপসর্গ ধরা পড়ে। যেমন:

০১) ক্ষুধামন্দা, খাবারে অরুচি ও অনীহা; 

০২) রাতজাগা, সকালে অধিকবেলা পর্যন্ত ঘুমানো,; 

০৩) স্বাস্থ্যহানী এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া; 

০৪) স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক হাত-খরচ বা যেকোনো উপায়ে বেশি বেশি টাকা নেয়া; 

০৫) নেশাগ্রস্থ বন্ধুদের সাথে উঠা-বসা, আড্ডা, সময় কাটানো; 

০৬) বেশি রাতে বাড়ি ফেরা, বাড়ির বাইরে অনেক বেশি সময় অবস্থান করা; 

০৭) নির্জীব এবং ঝিমমেরে থাকা 

০৮) স্বাস্থ্য-চেহারার প্রতি উদাসীনতা; 

০৯) লেখাপড়া, পরিবার ও অফিসের কার্যক্রমে অনীহা। 

১০) সবার সাথে মেলামেশায় স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব ইত্যাদি।


মাদকাসক্তির কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় 

মাদকাসক্তির অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন: 

১) সঙ্গী-সাথীর প্রভাব: কিশোর-কিশোরী কিংবা তরুণ-তরুণীর মাদকাসক্তির প্রধান কারণ হচ্ছে মাদকাসক্ত বন্ধু-বান্ধব, সঙ্গী-সাথী। মাদক কোথায় পাওয়া যায়, কীভাবে সেবন করে ইত্যাদি বন্ধু-সাথীদের থেকেই জানা যায়। 

২) কৌতূহল: কৌতূহল থেকে অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল, মদ ইত্যাদি সেবন কিংবা পান করলে কেমন লাগে, কী অনুভূতি হয় তা জানার আগ্রহ থেকে অনেকে মাদকের জগতে প্রবেশ করে। 

৩) হতাশা: অনেকে হতাশা থেকেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। পারিবারিক অশান্তি, প্রেমে ব্যর্থতা কিংবা শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের হতাশা ভুলতে অনেকে মদের নেশায় ডুবে যায়। 

৪) সহজলভ্যতা: মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে মাদকের সহজলভ্যতা। গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ অনেক মাদকদ্রব্য হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। বিক্রেতারা চাহিদার ভিত্তিতে অনেক সময় ক্রেতার কাছে এগুলো পৌছেও দেয়। 

৫) মাদক বাণিজ্য ও পাচার: মাদক বাণিজ্য ও পাচারের মাধ্যমে অনেকে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন। দ্রুত ধনী হওয়ার জন্য অনেকে মাদক বাণিজ্য ও পাচারের যুক্ত হয়। এর প্রভাব পড়ে যুবসমাজের উপর। তারা সহজে মাদক পেয়ে যায়। 

৬) পরিবারের উদাসীনতা: পরিবারের অসচেতনতা ও উদাসীনতা সন্তানদেরকে মাদকাসক্ত করে তুলতে পারে। বাবা-মা দু’জনই যদি অনেক বেশি ব্যস্ত থাকেন তবে সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। বিত্তশালী পরিবার প্রায়শ সন্তানের হাতে পর্যাপ্ত টাকা তুলে দেন। বাড়তি টাকা সন্তানকে নেশার জগতে ঠেলে দিতে পারে। 

৭) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির অভাব: মাদক আমদানী, পাচার, পরিবহন, মজুদ, সংরক্ষণ, বিপনন, অপ্রাপ্তদের মাদক সেবন ইত্যাদি বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির অভাব রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরেরও কার্যকর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফলে মাদকের বিস্তার ঘটে।

৮) মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অজ্ঞতা: কিশোর-তরুণদের অনেকেই মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানে না। মজা করতে করতে কৌতূহলবশত তারা মাদকের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করে। কিন্তু এটি ধীরে ধীরে ধ্বংস এবং মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়- এ বিষয়ে তাদের অনেকেই সচেতন নয়। 

৯) মুক্ত গণমাধ্যম ও আকাশ-সংস্কৃতির প্রভাব: প্রচলিত টিভি-সিনেমা ছাড়াও এখন ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টগ্রামে দেশি-বিদেশি নাটক-সিনেমা, সিরিয়াল, পর্ণোছবি ইত্যাদি অনেক সহজলভ্য। এগুলোর প্রভাবে অনেকে মাদকের

জগতে প্রবেশ করে। 


মাদকাসক্তি প্রতিরোধে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা। 

এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে তা হচ্ছে: 

১) পরিবারের সচেতনতা, সতর্কতা ও সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীলতা, 

২) মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা, 

৩) বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা, 

৪) মাদকের উৎস নিয়ন্ত্রণ, 

৫) আইনের কঠোর প্রয়োগ ইত্যাদি।


সমাজে মাদকাসক্তির প্রভাব (Impact of drug addiction in society)

মাদকাসক্তি একটি সামাজিক সমস্যা। সমাজে মাদকাসক্তির বহুমুখী বিরূপ প্রভাব রয়েছে। বস্তুত মাদকাসক্তির কোনো সুফল নেই; কেবলই ক্ষতিকর প্রভাব। এখানে সমাজে মাদকাসক্তির প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো: 

০১) পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হয়: মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবার ও সমাজের কারো সাথেই সুন্দর, সাবলিল ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে পারে না। তারা খিটখিটে স্বভাবের হয়, তুচ্ছ ঘটনায় রেগে যায় এবং নির্জনে একাকি থাকতে পছন্দ করে। ফলে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। 

০২) অশান্তি তৈরি হয়: যে পরিবারে একজন মাদকাসক্ত রয়েছে সে পরিবারে শান্তি বা স্বস্তি বলে কিছু থাকে না। মাদকাসক্তের মাতলামি, বেপরোয়া মনোভাব, টাকার জন্য উচ্ছঙ্খল আচরণ পরিবার ও প্রতিবেশীর শান্তি বিনষ্ট করে। নেশার টাকার জন্য চুরি, ছিনতাই, পরিবারের সদস্যদের মারধোর এমনকি খুনের মত ঘটনাও বিরল নয়।

০৩) তরুণরা তাদের কর্মক্ষমতা হারায়: নেশা মানুষকে নির্জীব করে তোলে এবং ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তির কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। কাজে অনিয়মিত, অদক্ষ এবং অক্ষম হওয়ায় মাদকাসক্ত ব্যক্তির পেশাগত ঝুঁকি তৈরি হয়। 

০৪) সমাজের বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়: কোনো সমাজের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণ মাদকাসক্ত হলে ওই সমাজের বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়। একজন সুস্থ-সবল স্বাভাবিক মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্রে যে অবদান রাখতে পারে, একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি কখনো তা পারে না। ফলে মাদকাসক্তি সমাজের বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে। 

০৫) নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি হতে পারে: ক্যান্সার, লিভার সিরোসিসসহ নানা ধরনের রোগ-ব্যাধির জন্য মাদকাসক্তিকে দায়ী করা হয়। এসব অসুস্থতা জটিল এবং ব্যয়বহুল এমনকি মরণঘাতী। ফলে মাদকাসক্ত একজন মানুষ একটি পরিবারকে নিঃশেষ করে দিতে পারে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *