ইসলাম শিক্ষা কি
“যে শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃষ্টিকর্তাকে জানার এবং ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবনাদর্শ হিসেবে শিক্ষা দেওয়ার ও গ্রহণ করার ব্যবস্থা আছে, তাই ইসলামি শিক্ষা”। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী ইসলামের গুরুত্ব অনুধাবন করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে তার প্রয়োগ করার সুযোগ পায়। শিক্ষাথীরা ইসলামি চেতনা ও আদর্শে গড়ে উঠে এবং ব্যক্তি পরিবার, সমাজ, ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার যোগ্যতা অর্জন করে। এ শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো আল কুরআন এবং মহানবি (স.) এর সুন্নাহ। এ শিক্ষা আদর্শ জীবন ও সমাজ গঠনের যুগোপযোগী শিক্ষা । এ শিক্ষা গ্রহণ করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয।
ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্য
সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও ইলাহকে সঠিকভাবে জানা এবং স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক কী হবে তা জানার জন্য ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করা অপরিহার্য। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার জন্যও ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ইসলামি শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ স্রষ্টার সঠিক পরিচয় লাভ করে, তাঁর উদ্দেশ্যে সঠিকভাবে ইবাদকরতে সক্ষম হয়। ইসলামি সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য ও জ্ঞান বিজ্ঞানের অফুরন্ত ভাণ্ডারের সাথে পরিচয়ের জন্য ইসলামি শিক্ষা অত্যাবশ্যক। মানুষ আল্লাহর খলিফা হিসেবে তার দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য ইসলামি শিক্ষা লাভ করা অতীব জরুরি।
ইসলামি শিক্ষার বৈশিষ্ট্য
অহী ভিত্তিক শিক্ষা
ইসলামি শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো আল-কুরআন। ইসলামি শিক্ষার দ্বিতীয় ভিত্তি হচ্ছে মহানবি (স.) এর হাদিস। তাই এ শিক্ষা অন্যান্য শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ শিক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার পরিচয় জানা যায় এবং মানুষের প্রতি আল্লাহর অধিকার এবং আল্লাহর প্রতি মানুষের যে অধিকার রয়েছে তা জানা যায়।
ইসলামি শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তাআলার পরিচয়, রিসালাত, মুআমালাত ও মুআশারাত সংক্রান্ত শিক্ষা বাদ দিয়ে ইসলামি জীবন ও সমাজ কল্পনা করা যায় না। আল-কুরআনের প্রথম বাণীই হলো সৃষ্টিকর্তার নামে শিক্ষা গ্রহণ করার নির্দেশ সম্বলিত । আল্লাহ তাআলা বলেন,
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ - “পড়ো, তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন” । (সূরা আলাক-৯৬:১)
ইসলামের সকল শিক্ষাই কুরআন-হাদিসের আলোকে রচিত। মানুষের পার্থিব জীবনে যে শিক্ষার প্রয়োজন হয়, তা কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী করলে তা ইসলামি শিক্ষায় পরিণত হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا الكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهُكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
“রাসূল যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো এবং যা থেকে বিরত করেন তা বর্জন করো” । (সূরা হাশর ৫৯:৭)
মহানবি (স.) বলেন- “আমি তোমাদের কাছে দু'টো জিনিস রেখে যাচ্ছি- যতো দিন তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হ'ল আল্লাহর কিতাব আর তাঁর রাসূলের সুন্নাহ।” (মুয়াত্তা)
নৈতিকতা সম্বলিত শিক্ষা
ইসলামি শিক্ষার মাধ্যমে একজন মানুষ ইসলামি বিশ্বাস ও মূল্যবোধের আলোকে সকল কাজ কর্মে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার চেতনা লাভ করে। এ নৈতিক শিক্ষা মানুষকে সকল প্রকার অন্যায়-অসত্য, জুলুম, নির্যাতন করা থেকে পুত- পবিত্র রাখে। মানুষের চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস ও চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করে।
ইহকাল ও পরকালের কল্যাণময় শিক্ষা
ইসলামি আকিদা বিশ্বাস অনুযায়ী একজন মুসলমানকে দুনিয়া ও আখিরাত এই উভয় জগতের মঙ্গল ও শান্তির জন্য দুনিয়াতেই কাজ করতে হয়। ইসলামি শিক্ষা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করে। অন্যান্য শিক্ষায় শুধু জাগতিক কল্যাণের দিকটা প্রাধান্য পায়।
আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে দু'আ করার বিষয়বস্তু শিখাতে গিয়ে এভাবে বলেছেন-
ربنا اتنا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةٌ
“হে আমাদের প্রভু। আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান কর”। (সূরা বাকারা ২: ২০১) মানুষকে ইহকালে সুখ-সমৃদ্ধি লাভের কথা যেমন ভাবতে হয়, তেমনি পরকালের কথাও চিন্তা করতে হয়। ইসলামি শিক্ষা শুধু বৈষয়িক কিংবা ধর্মীয় কোন শিক্ষা নয় । মানব জাতির গোটা জীবন ব্যবস্থা তথা পার্থিব ও পারলৌকি প্রয়োজন পূরণ করার জন্য এ শিক্ষা অপরিহার্য।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions