যুক্তিবাক্য কাকে বলে | যুক্তিবাক্য কি
যুক্তিবাক্যের সংজ্ঞা (Definition of Proposition) :
আমাদের জ্ঞানগত ও যৌক্তিক চিন্তার একক হলো যুক্তিবাক্য। যুক্তিবাক্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে এল. এস. স্টেবিং (L.S Stebbing) বলেন, “যুক্তিবাক্য হচ্ছে তাই যার মাধ্যমে যে কোনো কিছু বিশ্বাস করা হয়, অবিশ্বাস করা হয়, সন্দেহ করা হয় অথবা সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়।” যেসব বিবৃতি সত্য বা মিথ্যা হতে পারে এখানে তাকে যুক্তিবাক্য বলে নির্দেশ করা হয়েছে। বাস্তবে যেসব বাক্য সত্য বা মিথ্যা হওয়ার যোগ্যতা রাখে তাকে যুক্তিবাক্য বলে।
কোনো কোনো যুক্তিবিদ মনে করেন যে, সাধারণত দু'টি পদের মাঝে কোনো সম্বন্ধের প্রকাশই হচ্ছে যুক্তিবাক্য। এক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো যে, অনেক যুক্তিবাক্যে সম্বন্ধের অস্বীকৃতি প্রকাশ পায়। এ সীমাবদ্ধতা এড়ানোর জন্য অনেক যুক্তিবিদ যুক্তিবাক্যের সংজ্ঞায় বলেন, “দু'টি পদের সংযোজিত রূপের প্রকাশই হলো যুক্তিবাক্য। কিন্তু এরকম সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে পদের সংজ্ঞায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। কারণ পদের সংজ্ঞায় বলা যায়, যে শব্দ বা শব্দ সমষ্টি যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য বা বিধেয়রূপে ব্যবহৃত হয় তাই পদ । অর্থাৎ পদের সংজ্ঞা ও যুক্তিবাক্যের সংজ্ঞার মধ্যে চক্রক দোষ দেখা দেয়। তাই অনেকেই অবধারণের মাধ্যমে যুক্তিবাক্যের সংজ্ঞা দেওয়াকে ত্রুটিহীন মনে করেন। দু'টি ধারণাকে মানসিকভাবে তুলনা করা হলো অবধারণ । আর ভাষায় প্রকাশিত অবধারণের রূপকে বলা হয় যুক্তিবাক্য।
যুক্তিবিদ এইচ ডব্লিউ বি যোসেফ (H.W.B. Joseph) অবধারণ ও যুক্তিবাক্যকে এক ও অভিন্ন মনে করতেন। তাঁর মতে, অবধারণ হলো একটি বিবৃতি । আর কোনো কিছু বিবৃত করতে গেলেই তা ভাষায় প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। এই ভাষায় প্রকাশিত বিবৃতিই হলো যুক্তিবাক্য। যুক্তিবিদ এইচ ডব্লিউ বি যোসেফ (H.W.B. Joseph) বলেন যে, অবধারণ এমন একটিা আকার যার মাধ্যমে আমাদের বস্তু সম্পর্কিত চিন্তা প্রকাশিত হয় । (Judgement is the form in which our thought of things realized and that it is only in judgement that we form concepts.)
মূলত যুক্তিবাক্যের মানসিক রূপের সাহায্যে অবধারণ গঠন করা হয় এবং পদের সাহায্যে যুক্তিবাক্য গঠিত হয় । দু'টি পদের মধ্যে কোনো সম্পর্কের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতিকে যুক্তিবাক্য বলে। প্রত্যেক যুক্তিতে এক বা একাধিক বাক্যের সাহায্যে অন্য একটি বাক্য প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়। অর্থাৎ যুক্তি হলো এক বা একাধিক বাক্যের সমাহার। আবার যুক্তিবাক্যকে বিশ্লেষণ করলে উদ্দেশ্য ও বিধেয় হিসেবে দুই ধরনের পদ পাওয়া যায়। এ কারণে যুক্তিবাক্যকে পদ ও অনুমান এ দু’দিক থেকে বিচার করা যায়। সুতরাং যুক্তিবাক্যের সংজ্ঞাকে আমরা দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে পারি।
অনুমানের দিক থেকে যুক্তিবাক্যের সংজ্ঞা ও যুক্তিবাক্য হলো অনুমানের এমন অংশ যেখানে কোনো কিছু সম্পর্কে বিবৃতি দেওয়া হয়। এ বিবৃতি সত্য বা মিথ্যা হতে পারে । যুক্তিবিদ এল, এস, স্টেবিং (L.S. Stebbing) বলেন যে, যুক্তিবাক্য হচ্ছে যে কোনো কিছু সম্পর্কে বিবৃতি যা অর্থপূর্ণভাবে সত্য বা মিথ্যা হতে পারে ।
অধুনা যুক্তিবিদ আই. এম. কপি (I.M. Copi) এবং কার্ল কোহেন (Carl Cohen) যুক্তিবাক্যের আরো পরিচ্ছন্ন সংজ্ঞা উপস্থাপন করে বলেন যে, যুক্তিবাক্য হলো ঘোষণামূলক বাক্য ব্যবহার করে একটি বিবৃতি যা সত্য বা মিথ্যা হতে পারেযদিও এর সত্যতা বা মিথ্যাত্ব অজানা থাকতে পারে । (Proposition is a statement; what is typically asserted using a declarative sentence, and hence always either true or false, although truth of falsity may be unknown.)
এফ. এইচ.স্নাইডার (E. H. Snyder), ডি.এইচ.স্নাইডার (D.H. Snyder) ও রায়ান ওয়াসেরম্যান (Ryan Wasserman) অতি সংক্ষেপে যুক্তিবাক্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন, “একটি যুক্তিবাক্য হলো ঘোষণামূলক বাক্য যা সত্য বা মিথ্যা হয়।” (A statement is a declarative sentence that is either true or false.) মূলত যুক্তিবাক্য হলো যুক্তিতে আশ্রয়বাক্য বা সিদ্ধান্ত হিসেবে ব্যবহৃত এমন একটি বিবৃতিমূলক বাক্য যা সত্য বা মিথ্যার যোগ্যতা রাখে ।
পদের দিক থেকে যুক্তিবাক্যের সংজ্ঞা :
যুক্তিবাক্য হলো দু'টি পদের মধ্যে কোনো সম্পর্কের প্রকাশ। যখন কোনো একটি পদের সাথে অন্য একটি পদের সদর্থক বা নঞর্থক সম্বন্ধ বিবৃত হয় তখন তাই হলো যুক্তিবাক্য। অর্থাৎ দু'টি পদের মধ্যে স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক কোনো সম্পর্কের লিখিত বা মৌখিক বিবৃতিকে যুক্তিবাক্য বলে। এ প্রসঙ্গে যুক্তিবিদ জে. এস. মিল (J. S. Mill) বলেন, যুক্তিবাক্য আমাদের আলোচনার একটি অংশ- এমন অংশ যেখানে কোনো একটি বিষয়কে অন্য একটি বিষয়ে সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় । অতএব, যুক্তিবাক্য একটি পদ সম্পর্কে অপর পদটির স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করে থাকে।
যুক্তিবাক্যের সংজ্ঞার উপরোল্লিখিত দু’টি দিকের সমন্বয় করে আমরা বলতে পারি যে, যুক্তিবাক্য হলো যুক্তি প্রক্রিয়ার এমন একটি অংশ যা সর্বদা দু'টি পদের মধ্যে সদর্থক বা নঞর্থক সম্বন্ধের প্রকাশ করে। উদাহরণ: সকল মানুষ হয় মরণশীল।'
‘কোনো মানুষ নয় দেবতা।' ইত্যাদি হলো যুক্তিবাক্য
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions