উন্নয়ন পরিকল্পনা কত প্রকার
উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রকারভেদ
কোন দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিশেষ পর্যায় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এবং নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রকার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়। উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রকারভেদেও মধ্যে নির্দেশভিত্তিক ও প্ররোচিত পরিকল্পনা, কেন্দ্রীয় ও বিকেন্দ্রিক পরিকল্পনা, বস্তুভিত্তিক ও আর্থিক পরিকল্পনা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রভৃতি প্রধান । এখানে কেবল স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করা হল ।
স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা
উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে বহুমুখী লক্ষ্য ও কর্মসূচি অন্তর্ভূক্ত থাকে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা প্রয়োজন হয়। কোন দেশে পরিকল্পনার মেয়াদ স্বল্পকালীন না দীর্ঘকালীন হবে তা নির্ভর করে সে দেশের পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যবলি, সম্পদ প্রাপ্তি, লক্ষ্য অর্জনের কৌশল এবং উন্নয়নের স্তর প্রভৃতি বিষয়ের ওপর। এ প্রেক্ষিতে দেখা যায় বর্তমান বিশ্বে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের পরিকল্পনাই প্রচলিত রয়েছে।
স্বল্পমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা :
যখন সুনির্দিষ্ট কতগুলো আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য স্বল্প সময়, যেমন পাঁচ বছর বা তার চেয়ে কম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তখন স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা বলে। এ পরিকল্পনার মধ্যে এমন ধরনের কর্মসূচি, প্রকল্প ও লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে যেগুলো জাতীয় স্বার্থে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন। প্রচলিত অর্থে বাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক ও দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোকে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা বলা যায়। কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি, বাণিজ্যের প্রসার, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সেচ ব্যবস্থার প্রসার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রভৃতি লক্ষ্যগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য ফেলে রাখা যায় না। সামাজিক স্বার্থে এগুলো স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্জন দরকার। তাই এসব লক্ষ্য স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হয়।
স্বল্পমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য হল-
(ক) আর্থ-সামাজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ও কর্মসূজির দ্রুত বাস্তবায়ন।
(খ) মেয়াদ ভিত্তিক বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার নিশ্চিত করা।
(গ) বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির সফলতা ও বিফলতা মুল্যায়ন করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(ঘ) দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।
(ঙ) কখনও কখনও দেশে বিরাজমান বিশেষ পরিস্থিতির কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনার মত একটি স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
(চ) পরবর্তী পরিকল্পনাগুলোর উন্নয়ন প্রক্রিয়া সহজ ও ত্বরান্বিত করা।
দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা:
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী প্রত্যাশিত চিত্র রূপকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় যেমন ১০, ১৫ বা ২০ বছরের জন্য যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় তাকে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা বলে। বস্তুত একটি দেশে পরপর কয়েকটি স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার সমন্বয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গঠন করা হয় ।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা উদ্দেশ্য ও লক্ষগুলো অঙ্গ পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি বিরামহীন প্রক্রিয়া যার মধ্যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোর মধ্যকার যোগাযোগ সব সময় অব্যাহত থাকে । কোন বছর বা পরিকল্পনার ব্যর্থতা অন্য বছর বা পরিকল্পনার সাফল্য দিয়ে পূরণ করা হয় ।
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে মাথাপিছু আয় ও পুঁজি গঠন বৃদ্ধি, কর্মসুযোগ বাড়ানো, কৃষিতে কারিগরি পরিবর্তন, পরিবেশগত উন্নয়ন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পক্ষেত্রে কাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের মন-মানসিকতার উন্নয়ন প্রভৃতি কর্মসূচির বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এ লক্ষ্যগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন পড়ে।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য হল-
১. দেশের যেসব গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কর্মসূচি ও লক্ষ্যের বাস্তবায়ন স্বল্প সময়ে সম্ভব নয়, সেগুলোর সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
২. পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন ও ধারাবাহিকতা রক্ষা ।
৩. কোন একটি পরিকল্পনার কোন ব্যর্থতা অন্য পরিকল্পনার মাধ্যমে পূরণ করে সার্বিক অগ্রগতি বজায় রাখা ।
৪. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর সাধণ করা ।
৫. দেশের অর্থ ব্যবস্থার ভারসাম্যহীনতা দূর করে উন্নয়নের জন্য সুদৃঢ় ভিত্তি রচনা করা ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions