Home » » আত্মসংযম কেন প্রয়োজন

আত্মসংযম কেন প্রয়োজন

আত্মসংযম কেন প্রয়োজন

হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: শক্তিশালী সে ব্যক্তি নয়, যে খুব কুস্তি লড়তে পারে। বরং প্রকৃত শক্তিশালী হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে। (বুখারি ও মুসলিম)

এ হাদিসখানিতে মহানবী (স) বলেছেন, যিনি শ্রেষ্ঠ কুস্তিগীর তিনি প্রকৃতপক্ষে শক্তিশালী বীর নন। কেননা কুস্তিতে জয়লাভ করা তার দৈহিক শক্তির একটা কৌশলমাত্র। কিন্তু এতে মানবিক শক্তি ও মনোবলের পরিচয় মেলে না। ক্রোধের সময় সাধারণত মানুষ নিজকে সামলাতে পারে না। যিনি ক্রোধের বশবর্তী হয়ে হিতাহিত জ্ঞান না হারিয়ে নিজের মনুষত্ববোধ বজায় রেখে কাজ করতে পারেন, সত্যিকার অর্থে তিনিই প্রকৃত বীর। হাদিসে তাকেই বীরশ্রেষ্ঠ আখ্যায়িত করা হয়েছে।

ক্রোধ দমন করা বীরত্বপূর্ণ কাজ। কেননা ক্রোধের সময় মানুষ যে কোন অঘটন ঘটাতে পারে। মারামারি, খুন-খারাবি এমনকি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও যুদ্ধ বাঁধিয়ে বিশ্বমানবতাও ধ্বংস করতে পারে। যার বাস্তব প্রমাণ আমরা পাই বিশ্ব ইতিহাসের পাতা উল্টালে বিভিন্ন যুদ্ধের পরিণামের দিকে তাকালে। কিন্তু ক্রোধের সময় নিজকে সংযত রাখা সাধারণ লোকের পক্ষে আদৌ সহজ ব্যাপার নয়। এটা মহাবীরত্বেরই কাজ।

ক্রোধ একটা হীন কু-প্রবৃত্তি। এ হীন কু-প্রবৃত্তিই সমাজ, রাষ্ট্রে-বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির মূল উৎস। ইসলাম তাই এ কু- প্রবৃত্তি ক্রোধকে মোটেই পছন্দ করে না। সুতরাং যিনি নিজকে ক্রোধ অবস্থায় সংযত রেখে আত্মার ওপর আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম, তিনিই যথার্থ বীরশ্রেষ্ঠ।


ক্রোধ দমনের উপায়

কখনও কোন মানুষের মধ্যে ক্রোধ নামক কু-প্রবৃত্তি প্রবল হলে একে দমন করার জন্য কয়েকটি উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন—

১. ক্রোধ অগ্নিতুল্য এবং তার গতি ঊর্ধ্বমুখী। তাই ক্রোধের উদ্রেক হলে দাঁড়ানো হতে বসে পড়তে হয়; বসা অবস্থায়ও দমন না হলে শুয়ে পড়তে হয়। এভাবেই ঊর্ধ্বমুখী ক্রোধ নিম্নগামী হতে পারে।

২. ক্রোধের সময় মানুষের ওপর শয়তান ভর করে। সুতরাং শয়তানকে দূর করার জন্য “আউযুবিল্লাহি” পাঠ করা হলে অথবা উযু করে নিলে ক্রোধ দমন হতে পারে।

৩. উপরের দুটি উপায় অবলম্বনের পরও যদি ক্রোধ দূর না হয়, তবে দু'রাকআত নফল নামায পড়তে হয়। নামায পড়ার পর আর ক্রোধ থাকতে পারে না ।


উপরোক্ত এ হাদিসের মূল শিক্ষা হল-

১. বীরত্বের লক্ষণ বা পরিচয় পেশী শক্তি প্রদর্শনের মধ্যে নয়।

২. সংযম ও ধৈর্যের সাথে ক্রোধ সংবরণের মধ্যে বীরত্ব ফুটে উঠে।

৩. ক্রোধ বা রাগ মুমিন চরিত্রের কাম্য নয়।

৪. ক্রোধ সংবরণ করতে না পারলে জীবনে ও সমাজে বহু অনিষ্ট সাধিত হয় এবং সমাজ-সভ্যতা বহু ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

৫. ক্রোধের সময় মানুষের বিবেক লোপ পায় এবং মানুষ তখন পশুর ন্যায় দৈহিক শক্তি প্রদর্শন করে।

৬. জ্ঞানী ও সুস্থ বিবেকবান মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *