রকেট আবিষ্কারের ইতিহাস
রকেট (১৯২৬)
-রবার্ট হাচিন্স গডার্ড
রকেট আবিষ্কার কোনো নতুন ঘটনা নয়। চীন দেশের মানুষ প্রথম এই রকেট বা হাউইকে ব্যবহার করেছিল মোঙ্গলদের সঙ্গে যুদ্ধ করার সময়। আতস বাজী হিসাবেও রকেটের ব্যবহার শুরু হয়েছিল দীর্ঘকাল ধরেই, এই হাউই বাজী হল পাঁচ-ছয় ইঞ্চি লম্বা একটা পিচবোর্ড বা বাঁশের সরু খোল। খোলের মধ্যে বারুদ পোরা থাকে। এই খোলের ভারসাম্য রাখার জন্য একটি লম্বা কাঠি লাগানো থাকে। বাজীর সলতেয় আগুন ধরিয়ে দিলেই বারুদ পুড়তে শুরু করে এবং খোলের পিছন দিক দিয়ে গ্যাস বের হতে থাকে। এই গ্যাস সামনের দিকে ঠেলা মারে। ফলে লম্বা খোলটা অনেক ওপরে উঠে যায়। বারুদটা পুড়ে শেষ হয়ে গেলে খোলের আর গতি থাকে না তাই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য মাটির দিকে নেমে আসে।
রকেটও পৃথিবী ছেড়ে ওপরে ওঠে এই হাউই বাজীর পদ্ধতিতেই। তবে এখানে শুকনো জ্বালানী বারুদ ব্যবহার করা হয় না, কারণ তাতে যথেষ্ট ধাক্কা দিয়ে রকেটকে ওপরে তুলে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। তাই ব্যবহৃত হয়। তরল অক্সিজেন ও পেট্রোল। দুটো আলাদা আলাদা ট্যাঙ্কে এই পদার্থগুলি রাখা হয়। ট্যাঙ্ক থেকে কন্ট্রোল ভাবের সাহায্যে আনা হয় জ্বালানী ঘরে। সেখানে পদার্থগুলি মিশে জ্বলে উঠে। পরিত্যক্ত গরম গ্যাস জ্বালানী ঘর থেকে দ্রুতগতিতে পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায় ফলে রকেট সামনের দিকে খুব জোরে এগিয়ে যায়।
রেট্রো রকেট অর্থাৎ যে রকেটে মহাকাশযানের গতিবেগ কমে আসে। সেই রকেটে শুকনো জ্বালানী ব্যবহৃত হয়। রেট্রো রকেট থাকলে মহাকাশ | যান খুব সহজে মাটিতে নামতে পারে। রকেটে তরল জ্বালানী ব্যবহার করা ও তাকে মহাকাশে পাঠাবার উপায় | প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ১৯২৬ সালে রবার্ট হাচিন্স গডার্ড। তাঁর গবেষণা সম্বন্ধে একটি মজার ঘটনা আছে। তাঁর ল্যাবরেটরিটি ছিল একটি স্কুল বাড়ীর মাটির তলায়। সেখানে কাজ করতে গিয়ে একদিন তিনি সমস্ত স্কুলটাকে ধোঁয়ার ঢেকে দিয়েছিলেন। ফলে একজন বড় গণিতজ্ঞ ও বিজ্ঞানী হয়েও তাঁকে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বকুনি খেতে হয়েছিল।
রকেটকে মহাকাশে পাঠাতে গেলে তাকে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাটিয়ে উঠতে হয়, এজন্য রকেটের গতিবেগ ঘন্টা ২৫০০০ মাইলের বেশি হতে হয়। এই গতিবেগকে বলে এসকেপ ভেলোসিটি।
রকেট যদি সোজা না গিয়ে ঘুরে গিয়ে ঘন্টায় ১৫০০০ মাইল থেকে ২৫,০০০ মাইল গতিবেগের মধ্যে থাকে তবে সেটা ডিম্বাকারে ক্রমাগতই পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকবে, কৃত্রিম উপগ্রহগুলি এভাবেই ঘোরে।
পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য বিজ্ঞানীরা বড় আকারের একটি রকেট তৈরী করার কথা ভাবলেন, যেটি পর পর আরো দুটি ছোট রকেট বহন করতে পারে। বড় রকেটটি এমনভাবে তৈরী করা হল যাতে সেটি চল্লিশ মাইল ওপরে উঠে ঘন্টায় চার হাজার মাইল বেগে ছুটতে পারে। প্রথম রকেটের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে আগুন লাগে দ্বিতীয় রকেটের জ্বালানিতে। এবং প্রথম রকেটের থেকে নির্গত গ্যাসই সামনের দিকে ঠেলে দেয় দ্বিতীয় রকেটটিকে। এভাবে দ্বিতীয় রকেটও কিছুদূর গিয়ে তৃতীয় রকেটকে এগিয়ে দেয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions