কুরআন কি? বা কুরআন কাকে বলে?
আল-কুরআন (গ্রা) শব্দটি “কারউন” (ঐ) ধাতু থেকে এসেছে। এর অর্থ একত্র করা, সন্নিবেশ করা, জমা করা। আল্লামা যারকানী বলেন- কুরআন শব্দটি (কারা'আতুন) । ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ অধ্যয়ন করা ও পাঠ করা ।
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র)- বলেন, “আল-কুরআন মহান আল্লাহর সেই পবিত্র ও সম্মানিত কালাম যা তাঁর পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে যা রাসূলুল্লাহ (স) হতে আমাদের নিকট ধারাবাহিক বর্ণনায় কোনরূপ সন্দেহ-সংশয় ব্যতীত পৌঁছেছে।”
আল-কুরআন মানব রচিত কোন গ্রন্থ নয়। এ গ্রন্থের ভাব, ভাষা, মর্ম-বিষয়বস্তু সবকিছুই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। এতে মানব জাতির পার্থিব ও পরলৌকিক জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান রয়েছে। পূর্ববর্তী সকল নবী- রাসূলের দাওয়াত ও তাদের প্রতি অবতীর্ণ আসমানি কিতাবের শিক্ষার সারসংক্ষেপ এ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। কুরআন নাযিল হওয়ার পর পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাব রহিত হয়ে গেছে। সুতরাং এখন আল-কুরআনই একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যা মানব জাতির কল্যাণ ও মুক্তির পথ প্রদর্শক।
আল কুরআন নামকরণের তাৎপর্য:
আল-কুরআনের অনেক নাম আছে। এর প্রমাণ কুরআনে পাওয়া যায়। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ নাম দু'টি। তা হল- আল- কুরআন (স্ত্রী) ও আল-ফুরকান (৮)। কুরআনের নামের অর্থ ও তাৎপর্যসহ একটি তালিকা এখানে দেওয়া হলো-
আল-কুরআন (পঠিত গ্রন্থ ) : পবিত্র এ কিতাব পঠিত হওয়ার জন্যই নাযিল হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত তা পঠিত হতেই থাকবে। আজ পর্যন্ত সর্বজনবিদিত ও স্বীকৃত সত্য হচ্ছে পৃথিবীতে একমাত্র কুরআনই সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ।
ইমাম রাগিব ইস্ফাহানি (র) কুরআন শব্দের এ নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে বলেন-
“আসমানি গ্রন্থের মধ্যে বিশেষ করে এ কিতাবকেই কুরআন বলা হয়েছে এ জন্য যে, আসলে এ কিতাবেই অন্যান্য সকল আসমানি কিতাবে বর্ণিত তথ্য ও বিষয়সমূহ একত্রে সন্নিবেশিত হয়েছে। পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থসমূহের শিক্ষা ও সারসংক্ষেপ এ পবিত্র গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে। মূলত বিশ্বের যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমাবেশ ঘটেছে এ কিতাবে।”
আল-ফুরকান (পার্থক্যকারী) : ফুরকান শব্দের অর্থ পার্থক্য ও প্রভেদকারী। আল-ফুরকান ঈমান ও কুফর, সত্য ও মিথ্যা এবং শিরক ও তাওহীদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী। এ কারণে কুরআনকে ফুরকান বলা হয়।
আল-কিতাব (মহাগ্রন্থ) : কিতাব অর্থ সন্নিবেশিত। কুরআনে সকল বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে বলে একে আল-কিতাব বা মহাগ্রন্থ বলা হয় ।
আল-যিকর (স্মারক) : যিকর অর্থ স্মারক। এ গ্রন্থে বিভিন্ন উপদেশ এবং পূর্ববর্তী জাতিসমূহের অবস্থা উল্লেখ আছে বলে একে আয-যিকর বলা হয়।
আত-তানযীল (নাযিলকৃত) : এ গ্রন্থ মহান আল্লাহর পক্ষ হতে মানবজাতির নিকট নাযিল হয়েছে। এজন্য একে আত-তানযীল বলা হয় ।
আল-কালাম (বাণী) : কালাম শব্দের অর্থ বাণী যা আকৃষ্ট করে। শ্রবণকারীর হৃদয়-মনকে আকৃষ্ট করে বলে একে আল-কালাম বলা হয় ।
আল-হুদা (দিশা) : এ নামকরণের কারণ হচ্ছে এটা সত্য পথের দিশারী।
আন-নূর (আলোকবর্তিকা) : কুরআনের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যা উদ্ভাসিত হয়, তাই একে আন-নূর বলা হয়।
আশ্-শিফা (প্রতিষেধক) : মানবাত্মার বিভিন্ন রোগ, যেমন- কুফর-শিরক, নিফাক, মূর্খতা এমনকি দৈহিক রোগও এর মাধ্যমে উপশম হয়। তাই কুরআনকে আশ-শিফা বলা হয়।
আল-হিকমা (বিজ্ঞানময়তা) : আল-কুরআনে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নির্ভরযোগ্য তথ্য ও তত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে। এজন্য একে আল-হিকমাহ বলা হয় ।
আল-হাকীম (বিজ্ঞানময় গ্রন্থ) : কুরআনের আয়াতসমূহ জ্ঞান-বিজ্ঞানে পরিপূর্ণ, তাই একে আল-হাকীম
বলা হয় । আল-হাবল (রশি) : যে লোক কুরআনকে মজবুত করে আঁকড়ে ধরবে সে অবশ্যই জান্নাত বা সুপথের সন্ধান পাবে। তাই একে আল-হাবল বলা হয়েছে।
সিরাতুল মুস্তাকীম (সরল পথ) : কুরআনের অনুসরণ করলে সরল ও মুক্তির পথে চলে জান্নাতে পৌঁছা যায়। এ কারণে এর নমাকরণ করা হয়েছে সিরাতুল মস্তিাকীম।
আল-মাসানী (পুনরাবৃত্তি) : প্রাচীন মানবজাতির কাহিনী পুনরায় এতে বর্ণিত হয়েছে। এজন্য এ গ্রন্থের নাম রাখা হয় আল-মাসানী।
আল-মাজীদ (মর্যাদাপূর্ণ) : কুরআন অতীব মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত গ্রন্থ, তাই একে আল-মাজীদ বলা হয়।
মাসহাফ (ফলক) : হযরত আবূ বকর (রা) সর্বপ্রথম কুরআনকে গ্রন্থাবদ্ধ করে এর নামকরণ করেন মাসহাফ ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions